কাশি আমাদের শরীরের একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি কিছু কিছু সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। বিভিন্ন কারনেই কাশির সমস্যা হতে পারে বিশেষ করে শীতের সময় আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারনপ কাশি বেশি দেখা যায়। সাধারণ অবস্থায় ২-৩ দিনের মধ্যে কাশি সেরে যায় তবে কিছু কিছু সময় তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তখন কাশি নিরাময় করতে কাশির বিভিন্ন ঔষধ রয়েছে সেগুলো সেবন করতে হয়। এই পোস্টে আমরা জানবো সেরা ১০টি কাশির ট্যাবলেট এর নাম সম্পর্কে।
কাশির ট্যাবলেট এর নাম এবং ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।
কশি সাধারণত ঠান্ডা, এলার্জি, ধুলাবালি এবং ধূমপান করার ফলে হয়ে থাকে। কাশি দুই ধরনের হয়ে থাকে শুকনো কাশি এবং গলায় কফ জমা কাশি। তাই ঔষধ সেবন করার পূর্বে কাশির ধরন অনুযায়ী যে ঔষধ গুলো কার্যকর হয় সে ঔষধ গুলো সেবন করতে হবে। তবে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হলে ডাক্তারের পরামর্শে নিয়ম অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা উত্তম।
কাশি হওয়ার কারণ।
বিভিন্ন কারনেই কাশির সমস্যা তৈরি হতে পারে। কশির সাধারণ কারণ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভাইরাল সংক্রমণ যেমন সর্দি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। যখন আমাদের শ্বাসনালী ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয় তখন কাশি হয়। এছাড়া অ্যালার্জি, ধুলাবালি, পরাগরেণু এবং পশুর লোম শ্বাসনালীতে প্রবেশ করার ফলেও কাশি হয়ে থাকে।
গরম এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলেও কাশি দেখা দেয়। যারা সবসময় ধূমপান করেন ও দূষিত পরিবেশে লম্বা সময় থাকেন তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে।কাশির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো অ্যাসিডিটি যেখানে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালি থেকে উঠে শ্বাসনালীতে চলে আসে। যা গলায় জ্বালা, খুশখুশে ভাব ও তীব্র কাশির সৃষ্টি করে।
এছাড়াও হাঁপানি এবং ফুসফুসের অন্যান্য রোগের কারণেে কাশি হয়ে থাকে। যেকোনো কশি যদি এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় তবে অতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা উত্তম।
সেরা ১০টি কাশির ট্যাবলেট এর নাম
কাশি একটি অস্বস্তিদায়ক এবং বিরক্তিকর একটি অসুখ। কাশি হলে তা নিরাময় করতে বাজারে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ঔষধ রয়েছে যা দ্রুত কাশি দূর করতে কার্যকরী।
নিচে কাশির ট্যাবলেট এর নাম গুলো উল্লেখ করা হলো:
- Dexotix (ডেক্সোটিক্স) 60 mg
- Doxiva (ডক্সিভা) 200 mg
- Dexifen (ডেক্সিফেন) 300 mg
- Xyflo (জাইফ্লো) 10 mg
- Deslor (ডেসলর) 5 mg
- Bukof (বিউকফ) 50 mg
- Aeron (এ্যারন) FT 4 mg
- Damacin (দামাসিন)
- Rupa (রুপা) 10 mg
- Doxin (ডক্সিন) 100 mg
উল্লেখিত এই ট্যাবলেট গুলো অতিরিক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী কাশি নিরাময় করতে দ্রুত কার্যকরী। তবে কাশি গুরুত্বর হলে ঔষধ গুলো সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
কাশির ট্যাবলেট এর ব্যবহার ও মূল্য।
কাশি হলে তা নিরময় করতে যেকোনো ঔষধ সঠিক নিয়মে সেবন করা উত্তম, এতে দ্রুত রোগ নিরাময় হয়। চলুন তাহলে জেনে নিই উল্লেখিত কাশির ট্যাবলেট এর নাম গুলোর ব্যবহার ও মূল্য সম্পর্কে।
নিচে কাশির ট্যাবলেট ব্যবহার ও মূল্য উল্লেখ করা হলো:
- Dexotix : এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দু’বেলা দু’টি এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে রাতে অথবা সকালে একটি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। এর একটি ট্যাবলেটের মূল্য ১০ টাকা।
- Doxiva : এটিও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দুটি ট্যাবলেট এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটি ট্যাবলেট খেতে হবে। এর ১০টি ট্যাবলেট বা এক পাতার মূল্য ৮০ টাকা।
- Dexifen : প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তিনটি ট্যাবলেট এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দুটি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। এর এক পাতার মূল্য ৪০ টাকা।
- Xyflo : এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে একটি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। জাইফ্লো এর একটি ট্যাবলেটের মূল্য ১৭.৫ টাকা।
- Deslor : এটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১/২টি এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ২টি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। এর এক পাতার মূল্য ৫০ টাকা।
- Bukof : এই ট্যাবলেটটি ১২ বছরের উর্ধ্বে ব্যক্তিদের জন্য দিনে একটি ট্যাবলেট খেতে হবে। বিউকফ একটি ট্যাবলেটের মূল্য ১১ টাকা।
- Aeron : এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দুটি এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। এর একপাতা বা ১০টি ট্যাবলেটের মূল্য ৭০ টাকা।
- Damacin : এই ট্যাবলেটটি সকলের ক্ষেত্রেই দৈনিক ৩টি করে ২-৩ সপ্তাহ খেতে হবে। এর এক স্ট্রিপ বা ৫০টি ট্যাবলেটের মূল্য ২৫০ টাকা।
- Rupa : এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ১/২টি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। রুপা ১০ এর একটি ট্যাবলেটের মূল্য ১২ টাকা।
- Doxin : এটি বাচ্চা এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই ৩টি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। এর এক পাতা বা ১০ টি ট্যাবলেটের মূল্য ২২ টাকা।
উল্লেখিত ট্যাবলেট গুলোর ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে রোগের অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
কাশির ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
উপরে আমরা জেনেছি কাশির ট্যাবলেট এর নাম এবং এর ব্যবহার এবং মূল্য সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো এই ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো সম্পর্কে। সাধারণত এই ট্যাবলেট গুলো ব্যবহারে তেমন তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তবে অনিয়মিত ব্যবহার বা ডোজ পুরোপুরি সম্পূর্ণ না করলে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
নিচে কাশির ট্যাবলেট গুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হলো :
- হালকা মাথা ঘোরানো।
- মখের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া।
- বমি বমি ভাব এবং বমি করা।
- পেটে সমস্যা বা ডায়রিয়া হওয়া।
- শরীর দূর্বল হয়ে য়াওয়া।
- সবসময় ক্লান্তি অনুভব করা।
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
- অতিরিক্ত ঘুম পূওয়া।
- উচ্চ রক্তচাপ হওয়া।
- শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি হওয়া।
- বিভিন্ন এলার্জিটিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া।
কাশির যেকোনো ট্যাবলেট সেবনের পর উল্লেখিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলোর একটিও প্রকাশিত হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়।
কাশি দূর করতে ঘরোয়া উপায় গুলো অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে থাকে এবং ঘরোয়া উপকরণ গুলো সহজেই বাড়িতেই পাওয়া যায়। কাশি নিরাময় করতে ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করলে দ্রুত সুস্থ হওয়া য়ায় তার পাশাপাশি বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত থাকা যায়। চলুন তাহলে জেনে নিই কশি দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা বা উপায় সম্পর্কে।
মধু ও আদা
মধু ও আদা কাশির জন্য বেশ উপকারী হয়ে থাকে। এটি করতে এক টুকরো আদার সাথে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার সেবন করুন। এতে কাশি থেকে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যায়।
তুলসি পাতা ও মধু
এটি করতে ৭/৮টি তুলসি পাতা বেটে রস বের করে নিতে হবে। এরপর এতে ২-৩ ফোটা মধু দিয়ে মিশিয়ে সকালে ও রাতে সেবন করুন। এটি মৃদু থেকে শুরু করে তীব্র কাশি নিরাময় করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
গরম পানি ও লেবু
এটি করতে একগ্লাস পরিমাণ পানি কুসুম গরম করে নিন।এরপর তাতে এক চামচ পরিমান লেবুর রস মিশিয়ে দিনে তিন বেলা সেবন করুন। এটি দ্রুত কাশি নিরামায় করতে বেশ কার্যকরী।
ঝাল আদা চা
ঝাল আদা চা কাশির জন্য বেশ উপকারী হয়ে থাকে। এটি করতে কয়েক টুকরো আদা এবং একটি সম্পূর্ণ মরিচ কুচি কুচি করে কেটে চায়ের সাথে মিশিয়ে সেবন করুন। এটি সকালে এবং রাতে সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মধু ও দারুচিনি
কাশি নিরাময় করতে এই ঘরোয়া উপায়টি বেশ জনপ্রিয় এবং কার্যকরী। এটি করতে এক চামচ দারুচিনির সাথে পরিমাণ মতো কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে তা সেবন করতে হবে। এটি সকালে এবং সন্ধ্যায় সেবন করুন।
উল্লেখিত ঘরোয়া উপায় গুলো কাশি দূর করতে বেশ কার্যকরী। তবে তীব্র কাশি হলে বা কাশির সাথে রক্ত বের হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কাশির ট্যাবলেট এর নাম
কাশি হলে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ?
অনেক সময় দেখা যায় কাশি হলে তা নিরাময় করতে ঘরোয়া উপায় এবং বিভিন্ন ঔষধ সেবনের পরও নিরাময় হয় না। তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয় এছাড়াও কাশি হলে বেশ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে, যেগুলো প্রকাশ পেলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। চলুন জেনে নিই সে লক্ষণ গুলো সম্পর্কে।
- কাশি ৭-১০ দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
- অতিরিক্ত কাশির ফলে বুকে ব্যথা হলে।
- কাশির সাথে রক্ত বেড়িয়ে আসলে।
- শ্বাস নেয়ার সময় পাঁজরে ব্যথা হলে।
- নিশ্বাস নেয়ার সময় শব্দ হলে।
- কাশির কারনে তীব্র জ্বর হলে।
- কাশি অতিরিক্ত শুকনো হলে।
- রাতের বেলা কাশির মাত্রা বেড়ে গেলে।
- কাশির সময় মুখ নীল দেখালে।
- কাশির কারণে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি শুরু হলে।
কাশির উল্লেখিত এই লক্ষণ গুলোর যেকোনো একটি প্রকাশিত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
FAQ
প্রশ্নঃ কাশির সবচেয়ে ভালো ট্যাবলেট কোনটি ?
উত্তরঃ কাশির সবচেয়ে ভালো ট্যাবলেট গুলো হলো Dexotix, Doxiva, Dexifen, Xyflo, Deslor, Bukof, Aeron, Damacin, Rupa, Doxin ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ কাশির ট্যাবলেট কখন খাওয়া উচিত ?
উত্তরঃ কাশি শুরু হওয়ার প্রথম তিন দিন ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে হবে। এরপর নিরাময় না হলে ২-৩ দিন পর থেকে ঔষধ সেবন করা উচিত।
প্রশ্নঃ কাশির ট্যাবলেটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী ?
উত্তরঃ মাথা ঘোরা, মুখ শুকানো, বমিভাব, ক্লান্তি এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
প্রশ্নঃ কোন কাশির জন্য কোন ট্যাবলেট ভালো ?
উত্তরঃ শুকনো কাশির জন্য Deslor, Dexotix কফযুক্ত কাশির জন্য Bukof, Aeron এলার্জি জনিত কাশির জন্য Xyflo, Doxin এই ঔষধ গুলো সেবন করতে হবে।
প্রশ্নঃ কাশির ট্যাবলেট কি খালি পেটে খাওয়া যায় ?
উত্তরঃ কিছু ঔষুধ খালি পেটে খাওয়া যায় আবার কিছু ঔষুধ খাবারের পর খেতে হয়। তবে কাশির ট্যাবলেট এর নাম এবং কাশির ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শে নির্বাচন করা জরুরি।