আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেশ কিছু খারাপ অভ্যাসের কারনে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়। সাধারণত বসার সময় ঝুঁকে বসা, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, পর্যাপ্ত খাবার এবং পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে। মেরুদণ্ড বাঁকা হলে আমাদের শরীরের আকৃতি খারাপ হয়ে যায়।তাই আমরা দ্রুত মেরুদণ্ড সোজা করতে চাই। এজন্য আমরা জানতে চাই মেরুদণ্ড সোজা করার ব্যায়াম এবং অন্যান্য উপায় গুলো সম্পর্কে।
মেরুদণ্ড সোজা করার ব্যায়াম ।
মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গেলে আমাদের বেশ সমস্যায় পরতে হয়। তাই আমরা এ বাঁকা মেরুদণ্ড দ্রুত সোজা করতে চাই। মেরুদণ্ড সোজা কারার বেশ কিছু ব্যায়াম রয়েছে। যে ব্যায়াম গুলো সঠিক নিয়মে করলে খুব দ্রুত মেরুদণ্ড সোজা হতে শুরু করবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মেরুদণ্ড সোজা করার ব্যায়াম গুলো সম্পর্কে।
মেরুদণ্ড সোজা করার ব্যায়াম গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
পুশআপ ব্যায়াম
- মেরুদণ্ড সোজা করতে প্রথমে এ ব্যায়ামটি দিয়ে শুরু করতে হবে।
- কারন এ ব্যায়ামটি করলে সমস্ত শরীরকে প্রভাবিত এবং শরীরে গঠন এবং স্বাভাবিক দ্বারা বজায় রাখে।
- এ ব্যায়ামটি দুপুরে এবং রাতে দু’বার করুন।
চাইল্ডপোজ ব্যায়াম
- চাইল্ড পোজ ব্যায়ামটি করতে নামাজ পরার মতো পজিশন নিয়ে বসুন।
- এরপর সিজদা দেওয়ার মতো করে কপাল এবং নাক মাটিতে লাগান।
- হাত সামনের দিকে সোজা করে রাখুন।
- এসময় দু’পায়ে পাতা সোজা এবং মিশিয়ে রাখুন।
- এভাবে ১ মিনিট করে ১৫ বার এ ব্যায়ামটি করুন।
হাই প্ল্যাঙ্ক ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করার জন্য পুশআপ দেওয়ার মতো পজিশনে যান।
- এর পর মাথা এবং নিতম্ব উপরের দিকে রেখে পিঠের অংশ নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন।
- এভাবে ১-২ মিনিট এ অবস্থায় থাকুন।
- এ ব্যায়ামটি ১০-১৫ মিনিট করে দিনে দু’বার করুন।
প্লাঙ্ক ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করার জন্য প্রথমে পেটের উপর ভর দিয়ে মেঝেতে শুইয়ে পড়ুন।
- এরপর কনুই এবং পায়ের আঙ্গুলের সাহায্য নিজেকে উপরে তুলুন এ পজিশন ১-২ মিনিট থাকুন।
- এভাবে এ ব্যায়ামটি ১৫-২০ মিনিট করে দিনে ২ বার করুন।
- এটি মেরুদণ্ড সোজা করতে বেশ কার্যকরী একটি ব্যায়াম।
গ্লুট ব্রিজ ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করতে পিঠের উপর ভর দিয়ে মেঝেতে শুইয়ে পড়ুন।
- এরপর পায়ের পাতা এবং মাথা ও ঘাড়ের অংশে ভর দিয়ে কোমড়ের অংশ উপরের দিকে তুলুন।
- এভাবে ২০ সেকেন্ড থাকুন। এভাবে এ ব্যায়ামটি দিনে দু’বার করে করুন।
ফোল্ড টিল্ট ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করতে প্রথমে দু’পায়ের উপর সেজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
- এর পর হাঁটু ভাজ না করে শুধু কোমড়ের অংশ ভেঙে নিচের দিকে ঝুঁকে মেঝেতে হাত রাখুন এ অবস্থায় ২০ – ৩০ সেকেন্ড থাকুন।
- এভাবে ১০ বার করে দিনে দু’বার এ ব্যায়ামটি করতে হবে।
উল্লেখিত এ ব্যায়াম গুলো মেরুদণ্ড সোজা করতে বেশ কার্যকরী এবং পরীক্ষীত ব্যায়াম। তাই মেরুদণ্ড সোজা করতে উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো একটি ব্যায়াম প্রতিদিন করলে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে কার্যকরী ফলাফল দেখতে পাবেন।
মেরুদন্ড বাঁকা হয় কেন ?
সাধারণত আমাদের বাজে অভ্যাসের কারনেই মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে থাকে। এছাড়াও মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার বেশ কিছু কারন রয়েছে। তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার কারন গুলো হলো:
স্কোলিওসিস
- মেরুদণ্ড একপাশে বেঁকে গেলে একে স্কোলিওসিস বলা হয়।
- এটি মূলত জিনগত কারনে হয়ে থাকে।
কাইফোসিস
- মেরুদণ্ডের উপরের অংশ বাকা হলে একে বলা হয় কাইফোসিস।
- এটি হয়ে থাকে মূলত বার্ধক্যজনিত কারনপ।
লর্ডোসিস
- মেরুদণ্ড নিচের দিকে বাঁকানো থাকলে একে বলা হয় লর্ডোসিস।
- এটি হয় মূলত দীর্ঘসময় ধরে ভারী জিনিস বা অতিরিক্ত ওজন বহন করার ফলে।
অস্টিওপরোসিস
- হাড়ের ঘনত্ব কমে গেলে একে বলা হয় অস্টিওপরোসিস।
- হাড়ের ঘনত্ব কমে গেলে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়।
- আঘাতপ্রাপ্ত মেরুদণ্ডে বড় ধরনের আঘাত বা চোট পেলে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়।
পড়ুন: ব্যায়াম
পেশীজনিত সমস্যা
- পেশি অতিরিক্ত দূর্বল থাকলে এবং পেশিতে অস্বাভাবিক টানাপোড়েনের কারনে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়।
সাধারণত উল্লেখিত এ কারন গুলোর জন্যই আমাদের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়। যদি আপনি লক্ষ করেন যে আপনার মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যাচ্ছে তাহলে অতিবিলম্বে উল্লেখিত এ মেরুদণ্ড সোজা করার ব্যায়াম গুলো নিয়মিত করুন।
মেরুদন্ড শক্তিশালী করার তিনটি ব্যায়াম
এতোক্ষণ আমরা জেনেছি মেরুদণ্ড সোজা করার ব্যায়াম এবং মেরুদন্ড বাঁকা হওয়ার কারন সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো মেরুদন্ড শক্তিশালী করার তিনটি ব্যায়াম সম্পর্কে।
নিচে মেরুদন্ড শক্তিশালী করার তিনটি ব্যায়াম উল্লেখ করা হলো:
প্লাঙ্ক ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করতে প্রথমে পেটের উপর ভর দিয়ে মেঝেতে শুইয়ে পড়তে হবে।
- এরপর হাতের কনুই এবং পায়ের আঙ্গুলের সাহায্য নিজেকে উপরে তুলুন এ পজিশন ১-২ মিনিট থাকুন।
- এভাবে প্রতি দিন ১৫ মিনিট করে এ ব্যায়ামটি করুন।
হাই প্ল্যাঙ্ক বা কেট কাউ ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করার জন্য পুশআপ করার মতো পজিশন নিন ।
- এখন মাথা এবং নিতম্ব উপরের দিকে রেখে পিঠের অংশ নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন।
- এমন করে ১-২ মিনিট এ অবস্থায় থাকতে হবে।
- এ ব্যায়ামটি ১০-১৫ মিনিট করে দিনে দু’বার করে প্রতিদিন করুন।
ব্রিজ বা গ্লুট ব্রিজ ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করতে প্রথমে পিঠের উপর ভর দিয়ে মেঝেতে শুইয়ে পড়তে হবে।
- এরপর পায়ের পাতা এবং মাথা ও ঘাড়ের অংশে ভর দিয়ে কোমড়ের অংশ উপরের দিকে তুলতে হবে।
- এভাবে ২০ সেকেন্ড এ পজিশনে থাকুন।
- এভাবে এ ব্যায়ামটি দিনে দু’বার করে প্রতিদিন করুন।
উল্লেখিত এ ব্যায়াম গুলো মেরুদণ্ড এবং হাড় গুলোকে শক্তিশালি করতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
মেরুদন্ড ভালো রাখার উপায়।
মেরুদণ্ড আমাদের শরীরের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এটি সর্বদা সুস্থ এবং সবল রাখতে আমাদের সকলকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। মেরুদণ্ড ভালো রাখার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। মেরুদন্ড ভালো রাখার সে উপায় গুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মেরুদন্ড ভালো রাখার উপায় গুলো হলো :
- দাঁড়ানোর সময় ঝুঁকে দাঁড়ানো যাবে না স্ট্রেট সোজা হয়ে দাঁড়ানোর অভ্যাস করতে হবে।
- বসার সময় মেরুদণ্ড ঝুঁকে বসা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সোজা হয়ে বসার অভ্যাস করতে হবে।
- শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়ার কারনে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায় তাই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ব্যায়াম মেরুদণ্ডকে সোজা এবং স্বাভাবিক রাখতে অত্যান্ত কার্যকরী।
- দীর্ঘ সময় ধরে বসে এবং দাঁড়িয়ে কাজ করলে কিছুক্ষন পার পর কাজ থামিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
- পেটের ওপর ভর দিয়ে ঘোমানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
- এটি মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার অন্যতম একটি কারন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে যা মেরুদণ্ড সুস্থ রাখতে দারুণ ভাবে কার্যকরী হয়ে থাকে।
এ ব্যায়াম গুলো মেরুদণ্ড ভালো রাখতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। তাই মেরুদণ্ড ভালো রাখতে নিয়মিত নিয়ম অনুসারে এ ব্যায়াম গুলো করতে পারেন।
মেরুদন্ডে ব্যথার কারণ কি ?
সাধারণত অধিক সময় ধরে ভারী কাজ এবং এক জায়গায় একটানা কিছুটা সামনের দিকে ঝুকে বসে থাকার মেরুদন্ডে ব্যথা হয়ে থাকে। এ কারণ গুলো ছাড়াও মেরুদণ্ড ব্যথা করার আরও বেশ কিছু কারন রয়েছে তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
মেরুদন্ডে ব্যথা করার কারণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- পেশিতে অতিরিক্ত টান পরলে মেরুদণ্ডে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
- মেরুদণ্ড স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বাকা হলে প্রায়সই ব্যথা হতে পারে।
- মেরুদণ্ডের মধ্যে স্নায়ু পথ সংকীর্ণ হয়ে গেলে ব্যথা হগে পারে।
- মেরুদণ্ডে বিভিন্ন সংক্রমণ বা ইনফেকশন হলে মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়ে থাকে।
- মেরুদণ্ডে কোনো কিছু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত তীব্র হলে ব্যথা হয়ে থাকে।
- দীর্ঘ সময় বাঁকা হয়ে বা ঝুঁকে বসে এবং দাঁড়িয়ে থাকলে মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়ে থাকে।
- অনেক সময় মানসিক চাপের কারনেও মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়ে থাকে।
সাধারণত উল্লেখিত এ কারন গুলোর জন্যেই মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়ে থাকে। মেরুদণ্ডে ব্যথা হলে উল্লেখিত মেরুদণ্ড সোজা করার ব্যায়াম করে এ ব্যথা সহজেই নিরাময় করতে পারেন।
মেরুদন্ডের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়।
মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করতে মেরুদণ্ড সোজা করার ব্যায়াম ব্যায়াম গুলো বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। তবে এছাড়াও বেশ কিছু উপায় রয়েছে যা মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মেরুদণ্ডের ব্যথা নিরাময় করার সে উপায় সম্পর্কে।
নিচে মেরুদন্ডের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় গুলো উল্লেখ করা হলো :
- মেরুদণ্ডে ব্যথা হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
- ব্যথাজনিত স্থানে কুল ওয়াটার বা বরফের সেক নিন।
- বসার এবং দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে থাকা অভ্যাস করুন।
- মেরুদণ্ডে ব্যথা হলে হালকা শ্রমজনিত ব্যায়াম করুন।
- ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ট্যাবেলট সেবন করুন।
- শরীরে অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
- অতিরিক্ত ভারী জিনিস তোলা এবং বহন করা থেকে বিরত থাকুন।
উল্লেখিত এ পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে খুব দ্রুত সময়ে সহজেই মেরুদন্ডের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।