বাচ্চাদের এলার্জি ঔষধ এর নাম এবং ব্যবহার বিধি।

বাচ্চাদের এলার্জি হওয়া যা একটি সাধারণ এবং স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত বড়দের চেয়ে ছোট বাচ্চারা এলার্জি আক্রান্ত বেশি হয়ে থাকে। ছোট বাচ্চাদের এলার্জি হলে ত্বকে চুলকানি হয়ে ফুসকুড়ি পরে অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়। তাই আমাদের বাচ্চাদের এলার্জি হলে আমরা তা দ্রুত নিরাময় করতে চাই। এজন্য আমরা জানতে চাই বাচ্চাদের ঔষধ এর নাম সম্পর্কে।

বাচ্চাদের এলার্জি ঔষধ এর নাম ।

আমরা সকলেই কম বেশি এলার্জি রোগটির সাথে পরিচিত। এলার্জি এমন একটি রোগ যে রোগে ছোট বড় সকলেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এলার্জি একটি সাধারণ রোগ হলেও এর কারনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেশ সমস্যায় পরতে হয়। এর ব্যাতিক্রম নয় শিশু বাচ্চারাও।

সাধারণত ছোট বাচ্চারা অধিক সময় ধুলো বালির সংস্পর্শে থাকার কারনে বড়দের তুলনায় ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এলার্জির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বাচ্চাদের এলার্জি হলে দ্রুত তা নিরাময় করা না হলে তা বাচ্চাদের শরীরের অন্যান্য রোগের কারন হতে পারে।

তাই বাচ্চাদের এলার্জি দ্রুত নিরাময় করতে আমরা জানতে চাই যে সবচেয়ে কার্যকরী বাচ্চাদের এলার্জি ঔষধ এর নাম সম্পর্কে। নিচে বাচ্চাদের এলার্জি নিরাময়ের সবচেয়ে দ্রুত সময়ে কার্যকরী কয়েকটি ঔষধ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বাচ্চাদের এলার্জি ঔষধ এর নাম গুলো হলো:

  1. ফেক্সো ১২০ মি.গ্রা. ( Fexo 120 mg ) Tablet
  2. রুপাডিন ১০ মি.গ্রা. ( Rupadun 10 mg ) Tablet
  3. ডেসলর ৫ মি.গ্রা. ( Deslor 5 mg ) Tablet
  4. ওরাডিন ১০ মি.গ্রা. ( Oradin 10 mg ) Tablet
  5. বিলাস্টিন ২০ মি.গ্রা. ( Bilastin 20 mg ) Tablet
  6. সিজনিক্স ৫ মি.গ্রা. ( Seasonix 5 mg ) Tablet
  7. লরাটিন ১০ মি.গ্রা. ( Loratin 10 mg ) Tablet
  8. হিস্টাসিন ৪ মি.গ্রা. ( Histacin 20 mg ) Tablet
  9. এ্যালাট্রোল ১০ মি.গ্রা. ( Alatrol 10 mg ) Tablet
  10. এট্রিজিন ১০ মি.গ্রা. ( Atrizin 10 mg ) Tablet

মনে রাখতে হবে উল্লেখিত এ ঔষধ গুলো কোনো ক্রমেই ২ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে সেবন করানো সম্পূর্ণ নিষেধ। উল্লেখিত এ ঔষধ গুলো খুব দ্রুত সময়ে এলার্জি নিরাময় করতে বেশ কার্যকরী ঔষধ।

বাচ্চাদের এলার্জির সিরাপ এর নাম।

এতোক্ষণ আমরা জেনেছি বাচ্চাদের এলার্জি ঔষধ এর নাম সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো শিশু বাচ্চাদের এলার্জির সিরাপ এর নাম সম্পর্কে। এলার্জি হলে তা নিরাময় করতে সাধারণত ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে সিরাপ সেবন করানো হয়। নিচে বাচ্চাদের এলার্জি নিরাময়ের সবচেয়ে কার্যকরী কয়েকটি সিরাপ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বাচ্চাদের এলার্জির সিরাপ গুলো হলো:

  1. এ্যালাট্রোল – ( Alatrol Syrup ) সিরাপ
  2. জাইরিল – ( Xyril Syrup ) সিরাপ
  3. জেলকর্ট – ( Xalcort Syrup ) সিরাপ
  4. আরটিকা – ( Artica Syrup ) সিরাপ
  5. বিলাস্টিন – ( Bilastin Syrup ) সিরাপ
  6. ফক্সো – ( Fexo Syrup ) সিরাপ
  7. অ্যালার্জিন এল এক্স – ( Alergin Lx Syrup ) সিরাপ
  8. ডেসলর – ( Deslor Syrup ) সিরাপ
  9. রুপাডিন – ( Rupadin Syrup ) সিরাপ
  10. অ্যালসেট – ( Alcet Syrup ) সিরাপ
  11. পেডামিন – ( Pedeamin Syrup ) সিরাপ
  12. এট্রিজিন ( Atrizin Syrup ) সিরাপ

ছোট বাচ্চাদের এলার্জি হলে উল্লেখিত সিরাপ গুলোর যেকোন একটি সেবন করালে খুব দ্রুত সময়ে এলার্জি নিরাময় হয়ে যাবে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কোন ঔষধ প্রয়োগ করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বাচ্চাদের এলার্জির মলম এর নাম।

বাচ্চাদের এলার্জি হলে প্রথমত ত্বকে চুলকানি হয়ে ফুসকুড়ি পরে যায়। পরবর্তীতে এলার্জি চলে গেলেও ফুসকুড়ি পরার ফলে যে দাগ হয় তা থেকে যায়। তাই বাচ্চারা স্কিন এলার্জিতে আক্রান্ত হলে অন্যান্য ঔষধের পাশাপাশি মলম বা ক্রিম ব্যবহার করতে হয়।

পড়ুন: স্কিন এলার্জি ক্রিম এর নাম।

তাহলে এলার্জি চুলকানি দূর হওয়ার পাশাপাশি ফুসকুড়ি পরার কারনে যে দাগ গুলো পরে তাও দূর হয়ে যায়। তাই বাচ্চাদের এলার্জি হলে আমরা জানতে চাই যে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী বাচ্চাদের এলার্জির মলম কোন গুলো। নিচে বাচ্চাদের এলার্জির সবচেয়ে কার্যকরী কয়েকটি ক্রিম এবং বাচ্চাদের এলার্জি ঔষধ এর নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

নিচে বাচ্চাদের এলার্জির মলমের নাম গুলো উল্লেখ করা হলো:

  1. অ্যালিভিও এক্সট্রা ( Alivio Extra ) মলম
  2. ইজেক্স ক্রিম ( Ezex Cream ) মলম
  3. টোজেন্ট ক্রিম ( Togent Cream ) মলম
  4. ফানজিডাল ক্রিম ( Fungidal Cream ) মলম
  5. অ্যালিভিও এক্সট্রা ( Alivio Extra ) মলম
  6. পেভিসোন ক্রিম ( Pevisone Cream ) মলম
  7. টোকোডার্ম প্লাস ( Tocoderm Cream ) মলম
  8. সালোবেট ক্রিম ( Salobet Cream ) মলম

উল্লেখিত এ মলম গুলো বাচ্চাদের এলার্জির কারনে হওয়া চুলকানি এবং ফুসকুড়ির ফলে হওয়া দাগ খুব দ্রুত সময়ে নিরাময় করতে বেশ কার্যকরী।

বাচ্চাদের এলার্জি কেন হয় ?

উপরে আমরা জেনেছি বিভিন্ন এলার্জি ঔষধ এর নাম সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো বাচ্চাদের এলার্জি কেন হয় ইত্যাদি সম্পর্কে। বাচ্চাদের শরীরে এলার্জি হওয়া একটি সাধারন ঘটনা যা বিভিন্ন কারনেই হতে পারে। বাচ্চাদের এলার্জি হয় মূলত তাদের জিনগত এবং পরিবেশগত কারনে। তাছাড়া বাচ্চাদের এলার্জি এওয়ার আরও বেশ কিছু কারন রয়েছে ।

তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:

জেনেটিক সমস্যা

জেনেটিক সমস্যার কারনে বাচ্চাদের এলার্জি হতে পারে। যদি বাবা মায়ের মধ্যে পূর্বে থেকে এলার্জি থেকে থাকে তাহলে তা জেনেটিক ফেক্টরে তাদের বাচ্চাদের মধ্যে থেকে যায়।

পরিবেশগত কারন

পরিবেশগত কারনে যেমন ধুলোবালি, ধোঁয়া এবং বিভিন্ন কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থের সংস্পর্শে আসলে বাচ্চাদের এলার্জি হয়ে থাকে।

খাবার

বেশ কিছু খাবার রয়েছে যে খাবার গুলো খেলে বাচ্চাদের এলার্জি হতে পারে। যেমন :- দুধ, ডিম, বাদাম সয়াবিন, গম এবং মাছ এ জাতীয় খাবার গুলো থেকে ছোট বাচ্চাদের এলার্জি রয়েছে।

ফাংগাল স্পোর

ফাংগাল স্পোরের কারনে অনেক সময় বাচ্চাদের এলার্জি হয়ে থাকে। তবে এর প্রবনতা বেশ কম।

মৌসুম পরিবর্তন

মৌসুম পরিবর্তনের কারনে কারনেও বাচ্চাদের এলার্জি হতে পারে। যেমন বসন্তে ফুলের পোলেন থেকে বাচ্চাদের এলার্জি হয়ে থাকে।

তাই এলার্জি থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করতে হলে তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। যদি এলার্জি হয়ে যায় তাহলে তা নিরাময় করার জন্য দ্রুত চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।

বাচ্চাদের এলার্জির লক্ষণ কি ?

বাচ্চাদের এলার্জি হলে সাধারনত তা বিভিন্ন লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ হয়ে থাকে। বাচ্চাদের এলার্জি হলে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বক,পেট,শ্বাসনালী এবং চেখের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে। তাছাড়া বচ্চাদের এলার্জি হলে আরও বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

নিচে বাচ্চাদের এলার্জির কয়েকটি লক্ষণ তুলে ধরা হলো:

  • বাচ্চাদের এলার্জি হলে ত্বকে খোস পরা এবং অতিরিক্ত চুলকানি হয়ে থাকে।
  • ত্বকে গোল বৃত্তের ন্যায় লালচে ফুসকুড়ি পরা।
  • ত্বক শুষ্ক বা খস খসে হয়ে যাওয়া এবং ত্বকের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিতে পারে।
  • অনবরত নাকদিয়ে পানি পরতে থাকা এবং সর্দিতে আক্রান্ত হওয়া।
  • অতিরিক্ত কাশি এবং গলায় অস্বস্তি বোধ করা।
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া।
  • চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরতে থাকা, চোখে অতিরিক্ত চুলকানি হওয়া এবং চোখ লাল হয়ে ফোলে যাওয়া।
  • পেটে তীব্র ব্যথা করা, বমি বমি ভাব হওয়া এবং শেষ পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়া।
  • ঠোট, মুখ এবং গলার চারপাশে ফোলে যাওয়া ইত্যাদি।

উল্লেখিত লক্ষণ গুলোর মধ্যে যদি ২/১ টি আপনার বাচ্চাদের মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে যে বাচ্চা এলার্জি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। বাচ্চাদের এলার্জি ঔষধ এর নাম

কোন কোন খাবারে বাচ্চাদের এলার্জি হতে পারে ?

উপরে আমরা আলোচনা করেছি বাচ্চাদের এলার্জি ঔষধ এর নাম সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো কোন কোন খাবারে বাচ্চাদের এলার্জি হতে পারে। ছোট বড় সকলেই সবচেয়ে বেশি এলার্জি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে বিভিন্ন খাবার থেকে। একেক বাচ্চা একেক রকমের খাবার খেয়ে এলার্জি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাধারণত যে খাবার গুলো সরাসরি এলার্জি বহন করে সে খাবার গুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

বাচ্চাদের এলার্জি জনিত খাবার গুলো হলো:

  • গরুর দুধ
  • ডিম
  • হাঁসের ডিম
  • চিনা বাদাম
  • কাজু বাদাম
  • আখরোট
  • ইলিশ মাছ
  • চিংড়ি মাছ
  • সয়াবিন
  • গম বা আটা
  • সরিষা ইত্যাদি।

উল্লেখিত এ খাবার গুলো সরাসরি এলার্জি বহনকৃত খাবার। এ খাবার গুলো যদি ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানোর হয় তবে তারা খুব দ্রুত এলার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে বড়দের ক্ষেত্রে এ খাবার গুলো তেমন কোন এলার্জিটিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।

বাচ্চাদের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় কি ?

শিশুদের এলার্জি হলে আমরা বেশিরভাগ সময়ই বিভিন্ন ঔষধের মাধ্যমে তা নিরাম করে থাকি। যার ফলে বাচ্চাদের মধ্যে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দেখা যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে ঘরোয়া উপায় এর অনেক সহজ সমাধান রয়েছে। নিচে বাচ্চাদের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

বাচ্চাদের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো হলো:

অ্যালোভেরার জেল

বাচ্চাদের এলার্জি হলে অ্যালোভেরার জেল প্রয়োগ করে তা নিরাময় করা যায়। প্রথমে একটি তাজা অ্যালোভেরার পাতা নিতে হবে এর পর এর থেকে জেল বের করে ভালো করে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর ত্বকের আক্রান্ত স্থানে দিনে ২ বার করে ৩ – ৪ দিন প্রয়োগ করতে হবে।

নারিকেল তেল

নারিকেল তেল বাচ্চাদের এলার্জির চুলকানি এবং ফুসকুড়ি দূর করতে বেশ কার্যকরী। প্রথমে পরিমান মতো নারিকেল তেল কুসুম গরম করে নিতে হবে। এরপর এলার্জি জনিত স্থানে তা প্রয়োগ করুন। যদি এর কার্যকরী প্রভাব দেখতে পান তাহলে দিনে ২/৩ বার করে তিন দিন প্রয়োগ করতে হবে।

গোলাপজল

এলার্জির কারনে বাচ্চাদের চোখ লাল হয়ে গেলে গোলাপজল ড্রপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গোলাপজল চোখের যে কোনো লালচে ভাব দূর করতে বেশ কার্যকরী একটি তরল। এটি বাচ্চাদের চোখে ১ ফোটা করে দিনে ২ বার দিতে হবে।

আমলকী এবং মধু

বাচ্চাদের এলার্জির কারনে যদি শ্বাসকষ্ট এবং পেট খারাপ হয় তাহলে আমলকী এবং মধু পেস্ট করে সবন করাতে পারেন। এটি বাচ্চাদের এলার্জি দূুর করার খুব কার্যকরী একটি ঘরোয়া উপায়।

উল্লেখিত এ পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই ঘরোয়া উপায়ে বাচ্চাদের এলার্জি নিরাময় করতে পারেন।  বাচ্চাদের এলার্জি ঔষধ এর নাম

Leave a Comment