আলকুশি হলো একটি শিম জাতীয় উদ্ভিদ যা সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল গুলোতে বেশি দেখা যায়। গ্রাম বাংলায় আলকুশির ফল বিলাই খামচি এবং বিলাই চিমটি নামে বেশ পরিচিত। আলকুশি ফলেলর আকৃতি অনেকটাই শিম এবং তেঁতুলের মতো দেখতে। আলকুশি একটি ঔষধি জাতীয় উদ্ভিদ। আলকুশির বীজ ও পাতা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও আলকুশির বেশ গুনাগুণ রয়েছে নিচে আলকুশির গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আলকুশি কি ?
আলকোশি হলো একটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ। আলকুশির লতা, পাতা, শিকড় এবং এর ফলের বীজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করার হয়ে থাকে। আলকুশি ফলের বীজে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে। আলকুশির লতা সাধারণত ২০-২৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে।
এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। তাছাড়াও আলকুশির বিভিন্ন পুষ্টিগুণ লক্ষ্য করা যায়, চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আলকুশির বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
আলকুশির পুষ্টিগুণ উপাদান গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- আলকুশির বীজে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন পাওয়া যায়, যা আমাদের পেশি গঠন এবং কোষ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- আলকুশিতে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড যা আমাদের স্নায়ুর কার্যকরীতা স্বাভাবিক রাখতে এবং বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- আলকুশিতে থাকা ফাইবার আমাদের পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে।
- এতে পাওয়াযায় প্রচুর পরিমানে মিনারেলস যা আমাদের হাড় মজবুত এবং রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- আলকুশি বীজে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, যা আমাদের দেহের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে থাকে।
উল্লেখিত পুষ্টিগুণ গুলো ছাড়াও আলকুশির আরোও উপকারীতা রয়েছে। তবে আলকুশি ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই সঠিক এটির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে।
আলকুশির ব্যবহার
আলকুশি সাধারণত ঔষধি উপাদান হিসেবে বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে এর বীজ গুঁড়া করে বিভিন্ন খাবারের সেবন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এটি আরো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আলকুশির ব্যবহার সম্পর্কে।
আলকুশির ব্যবহার গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
চুলের যত্নে
আলকুশিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলকে ঘণ করতে, চুলের গোড়া শক্ত করতে এবং চুল পরা রোধ করতে বেশ কার্যকরী। এটি চুলে প্রয়োগ করতে আলকুশির পাতার রস নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে। এরপর ২৫-৩০ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
পাকস্থলী এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিতে
আলকুশি আমাদের পাকস্থলীর হজম শক্তি বৃদ্ধি সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে কার্যকরী হয়ে থাকে। এটি ওর্য়োগ করতে আলকুশির বীজের পাউডার এক গ্লাস পরিমান পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ সাহায্য করে থাকে। আলকুশির পাউডার রক্তেকর শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর পাউডার প্রতিদিন সকালে ১-২ চামচ পরিমান খেলে ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রজনন শক্তি বৃদ্ধি
আলকুশিতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যাফ্রোডিজিয়াম যা পুরুষের প্রজনন শক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি সকালে বা রাতে একগ্লাস গরম দুধের সাথে ১ চা চামচ আলকুশি বীজের পাউডার মিশিয়ে সেবন করতে হবে।
মানসিক চাপ কমাতে
মানসিক চাপ কমাতে আলকুশির বীজের পাউডার বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। মানসিক চাপ কমাতে প্রতিদিন সকালে ২ গ্রাম পরিমাণ পাউডার গরম পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করতে হবে।
ক্লান্তি দূর করতে
শারীরিক দুর্বলতা কমাতে এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে এটি সাহায্য করে থাকে। ক্লান্তি দূর করতে সকালে বা রাতে এক চা চামচ করে আলকুশি পাউডার সেবন করতে পারেন।
এটি চিকিৎসা এবং খাদ্য তালিকায় ব্যবহার করা ছাড়াও কৃষি কাজে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে আলকুশির ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আলকুশির উপকারিতা
আলকুশি প্রায় দু’হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদিক ঔষদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে, উপরে আমরা আলকুশির কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আংশিক জেনেছি। তাছাড়াও আলকুশির আরোও বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে।
আলকুশির উপকারিতা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- আমাশয় দূর করতে আলকুশির ব্যবহার বেশ পুরোনো পদ্ধতি।
- সর্দি কাশি দূর করতেও এটি বেশ কার্যকরী।
- শারিরীক দুর্বলতা কামাতেও এটি কার্যকরী হয়ে থাকে।
- মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- আলকুশির পাউডার স্নায়ুতন্ত্রের জন্য বেশ উপকারী।
- এটি পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং গুণগত মান উন্নত করে থাকে।
- আলকুশির বীজ প্রোটিনের ভালো উৎস হওয়ায় এটি পেশির গঠন সহ শারীরিক শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- এটি আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে আনে।
- আমাদের চুল বৃদ্ধিতে এটি দারুণভাবে সাহায্য করে থাকে এবং খুশকি দূর করতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
- আলকুশির অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আমাদের হাড়ের ব্যথা এবং বাত রোগ দূর করতে বেশ কার্যকরী।
- আলকুশির প্রাকৃতিক উপাদান স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যা আামদের মানসিক শান্তি প্রদান এবং মানসিক চাপ কমায়।
- এটি হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করে এবং পেটের গ্যাস ও অম্বল দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
আলকুশি আমাদের সকলের জন্য অনেক উপকারি একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এটির পুষ্টিগুণ এবং সঠিক কার্যকরীতা পেতে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
আলকুশির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আলকুশির যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি এর বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। আলকুশি এবং আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার আগে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা জরুরি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আলকোশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
আলকোশির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- আলকুশির বীজের পাউডার সরাসরি ত্বকে লাগালে তীব্র চুলকানি সহ ত্বকে জ্বলাপোড়া এবং ত্বকে লালচে ভাব হয়ে যায়।
- এটি অতিরিক্ত পরিমানে গ্রহন করলে বমি বমি ভাব, পেটে সমস্যা বা ডায়রিয়া হতে পারে।
- এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করলেও কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় রক্তচাপ হ্রাস করে দেয়, যার ফলে মাথা ঘোরা এবং শরীর দুর্বল হয়ে পরে।
- আলকুশির অতিরিক্ত ব্যবহার ডোপামিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে মানসিক ভারসাম্যহীন এবং ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে।
- অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় আলকুশিতে অ্যালার্জি রয়েছে। যাদের এটিতে অ্যালার্জি রয়েছে তারা এটি গ্রহন করলে ত্বকের র্যাশ পরা, শ্বাসকষ্ট হওয়া। এবং চোখ দিয়ে পানি পরার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- গর্ভবতী মায়েদের জন্য আলকুশির ব্যবহারে নিষিদ্ধতা রয়েছে। কেননা এটি গর্ভধারণের সময় জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে বাড়িয়ে দেয় যা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
- অন্যান্য রোগের চিকিৎসার সময় এটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে বা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা এটি স্নায়ুবিষয়ক, মানসিক স্বাস্থ্য বা ডায়াবেটিসের ঔষুধের সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
তাছাড়াও অতিরিক্ত আলকোশি গ্রহন করলে লিভারের সমস্যা সহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। তাই আলকোশি ব্যবহারের পূর্বে এর ব্যবহারের মাত্রা জেনে বা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
আলকুশি ব্যবহারে সতর্কতা
আলকুশি আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী একটি ঔষধি উপাদান। তবে এটি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন না করলে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সঠিক বা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহারে এটি রোগ নিরাময়ের জন্য একটি কার্যকরী ঔষধ হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আলকোশি ব্যবহারের সতর্কতা গুলো।
আলকোশি ব্যবহারের সতর্কতা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- গ্রহণের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করা: আলকোসি সঠিক নিয়ম অনুযায়ী গ্রহন করা এবং অতিরিক্ত গ্রহন থেকে বিরত থাকা।
- ব্যবহারের পূর্বে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা: আলকোশি বা আলকোশি বীজের পাউডার গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় ব্যবহার: গর্ভাবস্থায় আলকোশি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি ব্যবহার করতে হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারের ক্ষেত্রে: যদি আপনি আলকোশি দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
- শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার: শিশুদের ক্ষেত্রে আলকোশি ব্যবহারের পূর্বে ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে, কেননা এটি শিশুদের নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
- আন্যান্য চিকিৎসা: যদি আপনি অন্য একটি চিকিৎসার জন্য ঔষধ গ্রহণ করছেন এমতাবস্থায় আলকোশি গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
আলকোশি ব্যবহারের ক্ষেত্রে উল্লেখিত সতর্কতা গুলো অবলম্বন করলে ঔষধের সঠিক কার্যকরীতা লক্ষ্যনীয় হবে।