বর্তমান সময়ে দিন দিন বায়ু দূষণ বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশের ঢাকাসহ বড় বড় শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যার ফলে আমাদের চারপাশে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট একটি অস্তিত্বদায়ক রোগ তাই এটি আমরা দ্রুত নিরাময় করতে চাই। শ্বাসকষ্ট দূর করতে ঔষধের পাশাপাশি বেশ কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা শ্বাসকষ্ট দূর করতে বেশ দারুণ ভাবে কার্যকর হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম সম্পর্কে।
শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম ।
শ্বাসকষ্ট নিরাময়ের অত্যান্ত কার্যকরী একটি উপায় হলো ব্যায়াম করা। সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করার মাধ্যমে কয়েকদিনের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট নিরাময় করা যায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম সম্পর্কে।
নিশ্বাস গননা ব্যায়াম
- প্রথমে মেরুদণ্ড এবং ঘার সোজা করে বসতে হবে।
- এরপর লম্বা শ্বাস গ্রহন করুন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন এতে করে শিরদাঁড়া টানটান হবে।
- এভাবে নিশ্বাস গ্রহন এবং ছাড়ার পরে এক গুনবেন।
- এভাবে করে প্রতিদিন ৮-১০ মিনিট এ ব্যায়ামটি করুন।
অনুলোম বিলোম ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করার জন্য একটি আদর্শ জায়গা নির্বাচন করুন যেমন বাড়ির ছাদ এবং বারান্দা এধরণের জায়গা।
- এরপর ধ্যান করার মতো করে পজিশন নিয়ে বসুন।
- এখন হাতের একটি আঙুল দিয়ে নাকের একাংশ চেপে ধরে অন্য অংশ বা নাসিকা দিয়ে নিশ্বাস গ্রহন করুন।
- এরপর ছাড়ুন এভাবে ৫ মিন করুন।
- এরপর অপর নাসিকা আঙুল দিয়ে বন্ধ করুন এবং অন্য নাসিকা দিয়ে নিশ্বাস গ্রহন করুন এবং ছাড়ুন।
মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়া ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করার জন্য প্রথমে ধ্যান করার মতো করে পজিশন নিয়ে আরাম করে বসুন।
- এরপর ভিতরের বা ফুসফুসের এর সম্পূর্ণ বাতাস মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন।
- এভাবে ৫ – ৭ মিনিট এ ব্যায়ামটি করুন।
- মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়া এ ব্যায়ামটি শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
এ তিনটি ব্যায়াম শ্বাসকষ্ট হলে তা নিরাময় করতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
শ্বাসকষ্ট হলে কোন ব্যায়াম ভালো ?
শ্বাসকষ্ট হলে আমাদের বেশ অস্বস্তিতে পরতে হয়। তাই আমরা অনেকেই শ্বাসকষ্ট ব্যায়াম করার মাধ্যমে নিরাময় করতে চাই। এজন্য আমাদের অনেকের প্রশ্ন থাকে যে শ্বাসকষ্ট হলে কোন ব্যায়াম ভালো এবং শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম সম্পর্কে।
পড়ুন: পেটের গ্যাস বের করার ব্যায়াম
শ্বাস কষ্ট হলে তা নিরাময় করতে সবচেয়ে দ্রুত কার্যকরী ব্যায়ামটি হলো অনুলোম বিলোম ব্যায়াম। অনুলোম বিলোম ব্যায়ামটি শ্বাসকষ্ট হলে অন্যান্য ব্যায়ামের তুলনায় বেশ দ্রুত কার্যকরী হয়ে থাকে।
অনুলোম বিলোম ব্যায়াম
- এ ব্যায়ামটি করার জন্য প্রথমেই একটি আদর্শ জায়গা নির্বাচন করুন।
- যেমন বাড়ির ছাদ এবং বারান্দা এ ধরণের জায়গা উপযোগী।
- এরপর ধ্যান করার মতো করে পজিশন নিয়ে পা ভাজ করে বসুন।
- এখন হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে নাকের একাংশ চেপে ধরে অন্য অংশ বা নাসিকা দিয়ে নিশ্বাস গ্রহন করুন।
- এরপর ছাড়ুন এভাবে ৫ মিন করুন।
- এরপর অপর নাসিকা অন্য হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে বন্ধ করুন।
- এখন অন্য নাসিকা দিয়ে নিশ্বাস গ্রহন করুন এবং ছাড়ুন।
- এভাবে সকালে এবং সন্ধায় ২ বার ৫-৭ মিনিট করে ২ বার করতে হবে।
৩-৪ দিন এ ব্যায়ামটি করলে শ্বাসকষ্ট নিরাময় হয়ে যাবে।
ব্যায়ামের অভাবে কি শ্বাসকষ্ট হয় ?
উপরে আমরা জেনেছি শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম এবং শ্বাসকষ্ট দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী ব্যায়াম সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো ব্যায়ামের অভাবে কি শ্বাসকষ্ট হয়। হ্যা ব্যায়ামের অভাবে শ্বাসকষ্ট হয়ে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
ব্যায়াম না করার ফলে ফুসফুসের যে ক্ষতিকর দিক গুলো রয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হলো:
- ব্যায়াম না করার শারীরিক ফিটনেস একেবারেই কমে যায়।
- যার ফলে আমাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা হৃাস পায় এবং এ কারনে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
- ব্যায়াম না করলে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম করার সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- নিয়মিত ব্যায়াম না করলে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া।
- হৃদরোগ হয়ে থাকে যার ফলে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে আমাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা এবং রোগ প্রতিরোধ বাড়ে।
- যার ফলে শ্বাসকষ্ট দূর হয়ে যায়।
শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের সকলকে নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শ্বাসকষ্ট সহ শরীরের নানা রকমের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ব্যায়াম করলে কি ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে ?
যদি আপনার প্রশ্ন হয়ে থাকে ব্যায়াম করলে কি ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে কিনা। তাহলে এর উত্তর হলো হ্যাঁ ব্যায়াম করলে কি ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্যায়াম করলে ফুসফুসের কি কি ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ব্যায়াম করলে কি ফুসফুসের যে যে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তা উল্লেখ করা হলো:
- প্রতিদিন ব্যায়াম করলে ফুসফুসের পেশিগুলো শক্তিশালী হয় যার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে ফুসফুসের বায়ুধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- যার কারনে অধিক অক্সিজেন গ্রহন করা যায় আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে ফুসফুসের রক্তনালির কার্যকারীতা বৃদ্ধি পায়।
- যার ফলে ফুসফুসে অক্সিজেন আদান প্রদান প্রক্রিয়া পরিষ্কার থাকে।
- এর ফলে আমাদের শ্বাসকষ্ট অনেকটাই দূর হয়ে যায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
- এর ফলে আমাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা দীর্ঘ মেয়াদি হয়।
- প্রতিদিন ব্যায়াম করলে ফুসফুসের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়।
- যার কারনে শ্বস নেওয়ার সময় ফুসফুসের প্রসারন এবং সংকোচন সহজ হয়ে যায়।
ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে আমাদের সকলেরই নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করতে হবে। শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম ।
ব্যায়াম করার সময় দ্রুত শ্বাসকষ্ট হয় কেন ?
উপরে আমরা জেনেছি শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম এবং ব্যায়াম করলে কি ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে ইত্যাদি সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো ব্যায়াম করার সময় দ্রুত শ্বাসকষ্ট হয় কেন এ সম্পর্কে। ব্যায়াম করার সময় দ্রুত শ্বাসকষ্ট হওয়ার বিভিন্ন কারন রয়েছে। সে কারন গুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ব্যায়াম করার সময় শ্বাসকষ্ট দ্রুত হওয়ার কারন গুলো হলো:
- ব্যায়াম করার সময় আমাদের শরীরের মাংসপেশিতে অক্সিজেনের চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়।
- তাই এই অক্সিজেনের চাহিদা পূরনের জন্য আমাদের খুব দ্রুত শ্বাস নিতে হয়।
- ব্যায়াম করার সময় আমাদের শরীরের মাংসপেশিতে যেমন অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে ঠিক তেমনি কার্বনডাই অক্সাইড উৎপন্নের পরিমান ও বৃদ্ধি পায়।
- তাই কার্বনডাই অক্সাইড বের করতে দ্রুত শ্বাস গ্রহন এবং ত্যাগ করতে হয়।
- যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম করেন না তাদের কার্ডিওভাসকুলার বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সিস্টেম অনেকটাই দূর্বল।
- তাই প্রথম অবস্থায় ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম করতে গেলে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
- যদি কারো পূর্বে থেকে থেকে শ্বাসকষ্ট থেকে থাকে তাহলে ব্যায়াম করার সময় শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে।
- তাই ধীরে ধীরে ব্যায়াম করতে হবে এবং প্রথম অবস্থায় কম কায়িক শ্রমজনিত ব্যায়াম করতে হবে।
- শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান পানি না থাকলে ব্যায়াম করার সময় শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
- তাই ব্যায়াম করার সময় সাথে পানি রাখতে হবে এবং কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করতে হবে।
সাধারণত উল্লেখিত এ কারন গুলোর জন্যই ব্যায়াম করার সময় আমাদের দ্রুত শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে কি শ্বাসকষ্ট হতে পারে ?
হ্যাঁ অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে বিভিন্ন কারনের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে কেন শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে কেন শ্বাসকষ্ট হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ব্যায়াম করার সময় শরীর অধিক অক্সিজেন গ্রহন করে থাকে। অধিক সময় ধরে ব্যায়াম করার ফলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবারহ করতে পারে না। যার ফলে আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।
- দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীরের পেশিতে ল্যাকটিক এসিড জমা হয়। আর শরীরে ল্যাকটিক এসিড বাড়ায় যার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
- অঅিক সময় ধরে ব্যায়াম করার ফলে হার্টের উপরে অতিরিক্ত চাপ পরে। তাই যদি কারো পূর্বে থেকে হার্টের সমস্যা থেকে থাকে তার অতিরিক্ত ব্যায়াম থেকে বিরত থাকতে হবে।
- কারো মধ্যে যদি পূর্বে থেকে অ্যাজমা বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো ফুসফুসে সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অতিরিক্ত ব্যায়াম থেকে বিরত থাকতে হবে। এমতাবস্থায় অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে শ্বাসকষ্ট চরম পর্যায়ে পৌছাতে পারে।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীরের ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে। আর ডিহাইড্রেশন আমাদের শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি করার অন্যতম একটি কারন।
তাই উল্লেখিত এ সমস্যা গুলো থেকে বাচঁতে আমাদের অতিরিক্ত ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম ।
ব্যায়ামের সময় কখন শ্বাস নিতে হয় ?
উপরে আমরা জেনেছি শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম এবং অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে কি শ্বাসকষ্ট বাড়ে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো ব্যায়ামের সময় কখন শ্বাস নিতে হয় এ সম্পর্কে ।
ব্যায়ামের সময় কখন শ্বাস নিতে হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
ভারি জিনিস তোলার সময় শ্বাস নেয়ার নিয়ম:
- ভারি জিনিস তোলার সময় শ্বাস ছাড়তে হবে।
- ভারি জিনিস নিচে নামানোর সময় শ্বাস নিতে হবে।
জগিং করার সময় শ্বাস নেয়ার নিয়ম
- জগিং করার সময় প্রতি দুই স্টেপ সামনে যাওয়ার পরে শ্বাস নিতে হবে।
- আবার দুই স্টেপ সামনে যাওয়ার পরে শ্বাস ছাড়তে হবে।
যোগ ব্যায়াম করার সময় শ্বাস নেয়ার নিয়ম
- যোগ ব্যায়াম সময় প্রসারন করার সময় শ্বাস নিতে হবে।
- যোগ ব্যায়াম সময় সংকোচন করার সময় শ্বাস ছাড়তে হবে।
এভাবে ব্যায়াম করার সময় সঠিক সময়ে শ্বাস গ্রহন এবং ছাড়তে হবে।