পায়ের ঘা সারানোর সেরা মলম এর নাম এবং ব্যবহার বিধি।

পায়ে এবং পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা হওয়ার বিভিন্ন কারন রয়েছে। অনেক সময় নানা কারনেই পায়ের আঙ্গুলের ফাকে ছত্রাক বাসা বাধে যার ফলে চুলকানি হয় এবং ধীরে ধীরে ঘা হয়ে যায়। এটি ক্ষতিকর কোনো রোগ না হলেও হাটাচলা করতে গেলে বেশ অসুবিধা হয়ে থাকে। এ ঘা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা জানতে চাই পায়ের ঘা সারানোর মলম বা ঔষধ সম্পর্কে।

পায়ের ঘা সারানোর মলম এর নাম এবং স্থায়ী সমাধান।

পায়ের ঘা একটি সাধারণ রোগ হলেও এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেশ অস্বস্তি এবং যন্ত্রণা সৃষ্টি করে থাকে। পায়ের ঘা মূলত ডায়াবেটিস, রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা, ইনফেকশন ও আাঘাত জনিত কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। পায়ে ঘা হলে সঠিক সময়ে যত্ন না নিলে তা আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই পায়ে ঘা হলে তা সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে নিরাময় করতে হবে।

পায়ে ঘা কেন হয় ?

পায়ে ঘা হওয়ার প্রধান কারণ হলো পায়ের কোথাও আঘাত প্রাপ্ত হওয়া, ডায়াবেটিস, পায়ে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা এবং বিভিন্ন ইনফেকশন। তবে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ছত্রাক হয়ে তা থেকে চুলকানির তৈরি হয় এবং এ থেকে সৃষ্টি হয় ঘা। কোনো কোনো ঘা হয়ে থাকে শুকনো আবার কোনো ঘা হয়ে থাকে ভেজা। শুকনো ঘা গুলো তেমন অসুবিধার তৈরি না করলেও পায়ের ঘা ভেজা হলে তা নিয়ে আমাদের বেশ বেক পেতে হয়।

ভেজা ঘা গুলো মারাত্মক হয় কারন সেখানে পুঁজ হয়ে তা নরম এবং ভেজাটে দেখায়। ঘা এর আকার এমন হলে খুব দ্রুত ঘা শুকানোর এন্টিবায়োটিক বা ট্যাবলেট সেবন এবং ক্ষত স্থানে পাউ ডার বা মলম প্রয়োগ করতে হবে। পায়ের ঘা বা ক্ষত সারাতে বিভিন্ন ঔষধের সাথে পায়ের ঘা সারানোর মলম ব্যবহার করতে হয়। পায়ের ঘা সারানোর সবচেয়ে কার্যকরী মলম গুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

পায়ের ঘা সারানোর মলম এর নাম।

পায়ের ঘা সারানোর মলম গুলো হলো:

  1. লুলিজল ( Lulizol ) মলম
  2. বার্নসিল ( Burnsil ) মলম
  3. ফিনট্রিক্স ( Fintrix ) মলম
  4. মাইকোফেম ( Muycofem ) মলম
  5. ট্রিকোডেরমা ( Tricoderma ) মলম
  6. বেক্ট্রোসিন ( Bactrocin ) মলম
  7. বায়োডিন ( Viodin ) মলম
  8. নেবানল ( Nebanol ) মলম
  9. ট্রেগো ( Trego ) মলম
  10. পভিসেপ ( Povisep ) মলম
  11. মোপি অয়েন্টমেন্ট ( Mupi Ointment ) মলম

ইত্যাদি মলম গুলোর যেকোন একটি মলম নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করলে পায়ের ঘা অতি দ্রুত নিরাময় হয়ে যাবে।

পায়ের ঘা সারানোর মলম এর ব্যবহার বিধি এবং মূল্য।

অনেক সময় দেখা যায় ঔষধের সঠিক ব্যবহার না করার ফলে ঔষধের কার্যকর কোন ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই আমাদের ঔষধের সঠিক ব্যবহর বিধি জেনে তা প্রয়োগ করতে হবে।

পায়ের ঘা সারানোর মলম এর ব্যবহার বিধি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • লুলিজল ( Lulizol ) মলম: লুলিজল এ মলমটি দৈনিক একবার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে দুই সপ্তাহ এটি ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। এর ১০ গ্রাম মলমের মূল্য ১০০ টাকা
  • বার্নসিল ( Burnsil ) মলম: এ মলমটি দৈনিক দু’বার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১ বার প্রয়োগ করতে হবে। এর ২৫ গ্রাম মলমের মূল্য ৪৫ টাকা।
  • ফিনট্রিক্স ( Fintrix ): এ মলমটি দৈনিক তিন বার করে ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ বার প্রয়োগ করতে হবে। এর ১৫ গ্রাম মলমের মূল্য ৯৫ টাকা।
  • মাইকোফেম ( Muycofem ): মাইকোফেম এ মলমটি দৈনিক তিন বার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ বার প্রয়োগ করতে হবে। এর ২০ গ্রামের মূল্য ৯৫ টাকা।
  • ট্রিকোডেরমা ( Tricoderma ): এ মলমটি দৈনিক দু’বার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক বার প্রয়োগ করতে হবে। ১০ গ্রাম মলমের মূল্য ৬০ টাকা।
  • বেক্ট্রোসিন ( Bactrocin ): এই মলমটি দৈনিক তিন বার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ বার প্রয়োগ করতে হবে। ১০ গ্রাম মলমের মূল্য ১৫০ টাকা।
  • বায়োডিন ( Viodin ): বায়োডিন এ মলমটি দৈনিক দু’বার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক বার প্রয়োগ করতে হবে। এর ১০ গ্রাম মলমের মূল্য ৫০ টাকা।
  • নেবানল ( Nebanol ): এ মলমটি দৈনিক তিন বার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১-২ বার প্রয়োগ করতে হবে। ১০ গ্রাম মলমের মূল্য ৩০ টাকা।
  • ট্রেগো ( Trego ): এ মলমটি দৈনিক তিন বার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক বার প্রয়োগ করতে হবে। ট্রেগো ১০ গ্রাম মলমের মূল্য ১৪০ টাকা।
  • পভিসেপ ( Povisep ): এ মলমটি দৈনিক দু’বার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। এর ৫ গ্রাম মলমের মূল্য ২৫ টাকা।
  • মোপি অয়েন্টমেন্ট ( Mupi Ointment ): এ মলমটি দৈনিক তিন বার ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দু’বার প্রয়োগ করতে হবে। ১০ গ্রামের মূল্য ১৪০ টাকা।

উল্লেখিত নিয়ম অনুসারে ক্ষত স্থানে মলম গুলো ব্যবহার করলে পায়ের ঘা খুব দ্রুত শুকিয়ে যাবে।

পায়ের ঘা সারানোর ঘরোয়া উপায়।

পায়ে ঘা হলে আমরা তা নিরাময়ের জন্য শুরুতেই পায়ের ঘা সারানোর মলম সহ আরও বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে থাকি। কিন্তু আমরা অননেকেই জানি না যে বেশ কিছু ঘরেয়া উপায় রয়েছে যা পায়ের ঘা সারাতে অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে থাকে। ঘরোয়া উপাদান গুলো প্রাকৃতিক এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হওয়ায় এগুলো ব্যবহারে শরীরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পরে না এবং ঘা সাড়াতে দ্রুত কার্যকর হয়।

পায়ের ঘা সারানোর ঘরোয়া উপায় গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

গরম পানির সেঁক

এটি করতে পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে ক্ষতস্থানে সেঁক দিতে হবে। ঘা সাড়াতে এভাবে দৈনিক ২-৩ বার গরম পানির সেক দিন। এটি পায়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।

হলুদ পেস্ট

এটি করতে প্রথমে এক চামচ হলুদ গুঁড়োতে পানি বা মধু মিশিয়ে হলুদের পেস্ট করে নিতে হবে। এরপর তা ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করতে হবে এভাবে দৈনিক দু’বার করুন। হলুদের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ দ্রুত ক্ষত সারাতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।

নারকেল তেল

নারকেল তেল ঘা সারাতে অত্যন্ত কার্যকরী হয়। এটি করতে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে পায়ের ঘা বা ক্ষত স্থানে কাঁচা নারকেল তেল প্রয়োগ করুন। এটি ত্বক মসৃণ রাখে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।

মধু

মধু প্রয়োগ করার পূর্বে ঘা বা ক্ষত স্থান ভালো ভাবে পরিষ্কার করে তাতে কাঁচা মধু লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। মধুর অ্যান্টিসেপটিক গুণ ইনফেকশন রোধ করে এবং ক্ষত দ্রুত শুকায়।

অ্যালোভেরা জেল

এটি করতে অ্যালোভেরার পাতা থেকে তাজা জেল বের করে নিন এবং তা ঘা বা ক্ষত স্থানে সরাসরি প্রয়োগ করুন। এটি ঘায়ের ব্যথা কমায় এবং ক্ষতস্থানে শীতলভাব প্রদান করে।

নিমপাতার পেস্ট

এটি করতে প্রথমে কয়েকটি নিমপাতা নিয়ে তা পেস্ট করে নিন। এরপর তা পায়ের ঘাতে প্রয়োগ করে কিছুক্ষন রেখে দিন এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ ক্ষত দ্রুত সারায় এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করে থাকে।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ঘা কেন হয় ?

ডায়াবেটিস রোগীদের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে পায়ে ঘা যা ডায়াবেটিক ফুট নামে আক্ষায়িত করা হয়। ডায়াবেটিক ফুট হলো প্রথমত ডায়াবেটিস রগীদের পায়ে ছোট খাটো ক্ষত হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এ থেকে অনেক সময় আলসার হয়ে যায়।

পড়ুন: হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঘা এর ঔষধ এর নাম 

এ ক্ষত বা রোগটি সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ না করতে পারলে এর ফলে ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত ইনসুলিন ব্যবহারকারী রোগীদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে।

তাছাড়া পায়ের মধ্যে ছোট খাটো কাটা ছেড়া হলে সে স্থান থেকে ধীরে ধীরে সেখান থেকে ঘা হয়ে থাকে। এসময় তামাক এবং অ্যালকোহল জাতীয় পণ্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। এমতাবস্থায় অতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ঘা প্রতিরোধ করার উপায় ?

সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের কোনো রকম কাটা ছেড়া হলে তা নিরাময় হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তেমনি পায়ের ঘা নিরাময় হতেও তার ব্যাতিক্রম নয়। ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ঘা প্রতিরোধ করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ঘা প্রতিরোধ করার উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ক্ষত হলে নিয়মিত বা ২-৩ দিন পর পর পরীক্ষা করতে হবে ।
  • পা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • প্রতিদিন পা ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • পায়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার কীতে হবে যাতে।
  • খেয়াল রাখতে হবে পায়ের ত্বক যাতে শুষ্ক না হয়।
  • এজন্য নিয়মিত পায়ের মধ্যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • ডায়াবেটিস রোগীর পায়ে ঘা হওয়া এড়াতে সঠিক জুতা পরতে হবে।
  • কঠোর বা শক্ত জুতা পরা থেকে বিরত থাকুন কেনা এটি পায়ের ক্ষতি করতে পারে।
  • ডায়াবেটির রোগীর সবসময় রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডায়াবেটিসের চিকিৎসা মেনে চলতে হবে।
  • যা ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষত নিরাময় করতে সহায়ক হবে।
  • এর জন্য বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ঔষুধ ব্যবহার করুন।
  • এতে করে দ্রুত পায়ের ক্ষত শুকিয়ে যেতে শুরু করবে।

মনে রাখতে হবে যে ডায়াবেটিস রোগীর যেকোনো রোগের চিকিৎসা দেওয়ার আগে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারন একটু ভুল চিকিৎসা হলে হীতে বিপরিত হতে পারে।

FAQ

পায়ের ঘা সারাতে কতদিন সময় লাগে ?

উত্তরঃ ছোট বা সামান্য ঘা গুলো সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে দুসপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে ক্ষত গভীর হলে তা সারতে প্রায় এক মাস সময় লাগতে পারে।

পায়ে ঘা হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত ?

উত্তরঃ পায়ের ঘা ৭-১০ দিনের বেশি স্থায়ী হলে এবং ব্যথা থাকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

পায়ে ঘা হলে কি করতে হবে ?

উত্তরঃ পায়ে ঘা হলে তা নিরাময় করতে প্রথমত ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে। ঘরোয়া উপায় কার্যকরী না হলে ঘা শুকানোর যে সাধারণ ঔষধ বা পায়ের ঘা সারানোর মলম গুলো রয়েছে তা প্রয়োগ করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top