কৃমি হলো একটি পরজীবী জীব যা বিভিন্ন প্রাণী বা পশু পাখির উপর নির্ভর করে জীবন ধারন করে থাকে। বিশেষ করে গরু,ছাগল এবং ভেরার মধ্যে কৃমি সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়। গরুর কৃমি হলে গঠনগত দিক এবং গরুর বৃদ্ধিতে বেশ ক্ষতিকর প্রভাব পরে। গরুর কৃমি হলে আমরা তা দ্রুত নিরাময় করতে চাই এজন্য আমরা অনেকেই জানতে চাই গরুর কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো এ সম্পর্কে।
গরুর কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো
গরুর কৃমি হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা যা কিছু ঔষধ গরুকে নিয়ম অনুসারে খাওয়ালে বেশ কয়েক দিনের মধ্যেই কৃমি দূর হয়ে য়ায়। গরুর কৃমিনাশক হিসেবে বাজারে বিভিন্ন ঔষধ পাওয়া যায় এর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত কার্যকরী কয়েকটি ঔষধের নাম নিচে উল্লেখ করা হয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক গরুর কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো এই সম্পর্কে।
দ্রুত কার্যকরী কয়েকটি গরুর কৃমির ঔষধের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো :
- ট্রেমাসিড ( Tremacid ) ট্যাবলেট
- লেভানিন্ড ( Levanind ) ট্যাবলেট
- এলটি ভেট ( LT-Vet ) ট্যাবলেট
- ট্রাইলেভ-ভেট ( Trilev-Vet ) ট্যাবলেট
- হেলমেক্স-ভেট ( Helmex-Vet ) ট্যাবলেট
- এ্যালমেক্স-ভেট ( Almex-Vet ) ট্যাবলেট
উল্লেখিত এ ঔষধ গুলো গরুর কৃমিনাশক হিসেবে বেশ কার্যকরী। এ ঔষধ গুলো নিয়ম অনুসারে খাওয়ালে বেশ দ্রুত সময়ের মধ্যে গরুর কৃমি নিরাময় হতে শুরু করবে।
বাছুরের কৃমিনাশক ঔষধের নাম।
এতোক্ষণ আমরা জেনেছি গরুর কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো এ সম্পর্কে এখন আমরা জানবো বাছুরের কৃমিনাশক ঔষধের নাম সম্পর্কে। বাছুর এবং পূর্ণবয়স্ক গরুর কৃমির আলাদা আলাদা ডোজ বা ঔষধ রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বাছুরের কৃমিনাশক ঔষধের নাম গুলো।
নিচে বাছুরের কৃমিনাশক ঔষধের নাম গুলো উল্লেখ করা হলো :
- পেরাভেট ( Peravet ) পাউডার
- নিউট্রক্স ভেট ( Neotrox Vet ) সিরাপ
- বেনাজল ভেট ( Benazol Vet ) ট্যাবলেট
- পেরাক্লিয়ার ( Peraclear ) ট্যাবলেট
- ফেনভেট ( Fenvet ) ট্যাবলেট
- এজিংক ভেট ( AZinc Vet ) সিরাপ
এ ঔষধ গুলো বাছুরের কৃমিনাশক হিসেবে বেশ কার্যকরী। বাছুরের কৃমি হলে উল্লেখিত ঔষধ গুলোর যেকোন একটি ঔষধ নিয়ম অনুযায়ী খাওয়ালে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই কৃমি নিরাময় হতে শুরু করবে।
বাছুরের কৃমি হলে কিভাবে বুঝবো ?
বাছুরকে কৃমি ঔষধ সেবন করারনোর পূর্বে জানতে হবে যে বাছুরের কৃমি হয়েছে কিনা। বাছুরের কৃমি হলে তা বেশ কিছু লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পেয়ে থাকে। বাছুরের কৃমি হলে যে যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
নিচে বাছুরের কৃমি হওয়ার লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলো :
- বাছুরের পশম গুলো এলোমেলো বা উসকো খুসকো হয়ে যাওয়া।
- বাছুরের শরীর দূর্বল হওয়া এবং দিন দিন শুকিয়ে যাওয়া।
- বাছুরের রক্ত এবং মিউকাস যুক্ত হয়ে ডায়রিয়া হওয়া এবং দুর্গন্ধ যুক্ত মল বের হওয়া।
- বাছুরের পেট ফুলে যাওয়া বা পেট বড় হয়ে যাওয়া।
- বাছুরের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেওয়া এবং এবং শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
- গাভীর দুধ গ্রহণের প্রতি অনিহা প্রকাশ পাওয়া।
- বাছুরের পেটে ব্যাথা হওয়া এবং ডাকাডাকি করা।
- বাছুরের চামরার উপর ক্ষত হওয়া বা চর্মরোগ দেখা দেওয়া।
উল্লেখিত এ লক্ষণ গুলো যদি বাছুরের মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে যে বাছুরটি কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। বাছুর কৃমি আক্রান্ত হলে অতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাছুরকে কৃমি ডোজ করাতে হবে।
গরুকে কৃমি থেকে মুক্ত রাখার উপায়।
উপরে আমরা জেনেছি জেনে নিন গরুর কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো এবং বাছুরের কৃমি দূর করার ঔষধ সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো গরুকে কৃমি থেকে মুক্ত রাখার উপায় সম্পর্কে। গরুকে কৃমি থেকে মুক্ত রাখার বেশ কিছু উপায় রয়েছে নিচে তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
আরও পড়ুন: গরুর কৃমি
নিচে গরুকে কৃমি থেকে মুক্ত রাখার উপায় গুলো উল্লেখ করা হলো :
- গরুর বাসস্থানের জায়গা আশেপাশের জায়গা থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে তৈরি করতে হবে।
- গরুর বাসস্থানের মাটিতে বালির পরিমান বেশি থাকতে হবে যাতে কাঁদা না জমে।
- গরুর বাসস্থানের জায়গা প্রতিদিন পরিষ্কার কীতে হবে, গরুর সংখ্যা বেশি হলে দিনে দু’বার পরিষ্কার করতে হবে।
- গুরুর বাসস্থানের মেঝে সম্ভব হলে বিভিন্ন ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করুন।
- গরু এবং বাছুরকে প্রতি চার মাস পরপর কৃমির ডোজ করাতে হবে।
- চার মাস পরপর নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে কৃমি ডোজ করাতে হবে।
উল্লেখিত এ পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে গরু এবং অন্যান্য গবাদিপশুকে কৃমি থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
গরুর কলিজা কৃমির লক্ষণ।
কলিজা কৃমির আকৃতি কয়েক রকমের হয়ে থাকে। কলিজা কৃমি সাধারণত পাতার মতো আকৃতি এবং গোল আকৃতির হয়ে থাকে। কলিজা কৃমি গরু বা অন্যান্য পশুর জন্য বেশ ক্ষতিকর একটি রোগ। এ রোগটি হলে গরুর মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ ফুটে উঠে। কলিজা কৃমির সে লক্ষণ গুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
নিচে গরুর কলিজা কৃমির লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলো :
- কলিজা কৃমি গরুর শরীর থেকে রক্ত এবং খনিজ উপাদান শোষন করে ফেলে যার ফলে রক্তসল্পতা দেখা দেয়।
- কলিজা কৃমি হলে গরুর চোয়ালের নিচে এবং চামড়ার মধ্যে জলপূর্ণ স্ফীতি হয়ে যায়।
- কলিজা কৃমি আক্রান্ত গরুর খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া বা বদহজম হওয়া।
- কলিজা কৃমি আক্রান্ত গরুর ঘন ঘন ডায়রিয়া হওয়া এবং মল অতিরিক্ত পাতলা হওয়া।
- এ রোগে আক্রান্ত গরুর ক্ষুধামন্দা দেখা দেওয়া এবং শরীরে দিন দিন দূর্বল হয়ে যাওয়া।
- গরুর কলিজা হলে পেটে ব্যথা করা যার জন্য অতিরিক্ত ডাকাডাকি করা।
- কলিজা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত গরুর মলে কৃমির ছোট ছোট ডিম দেখতে পাওয়া।
- কলিজা কৃমির হলে গরুর শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়া।
উল্লেখিত এ লক্ষণ গুলো কোনো গরুর মধ্যে দেখতে বুঝতে হবে গরু কলিজা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। গরু কলিজা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে অতিবিলম্বে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
প্রাকৃতিক ভাবে গরুর কৃমি দূর করার উপায়।
এতোক্ষণ আমরা জেনেছি গরুর কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো এবং গরুর কলিজা কৃমির লক্ষণ সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো প্রাকৃতিক ভাবে গরুর কৃমি দূর করার উপায় সম্পর্কে। প্রাকৃতিক ভাবে বেশ কিছু উপায়ের মাধ্যমে গরুর কৃমি দূর করা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রাকৃতিক ভাবে গরুর কৃমি দূর করার উপায় গুলো।
প্রাকৃতিক ভাবে গরুর কৃমি দূর করার উপায় গুলো হলো:
নিমপাতা
- নিমপাতা গরুর কৃমিনাশক হিসেবে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
- নিমপাতা ঘাসের সাথে মিশিয়ে গরুকে খাওয়াতে হবে।
- এভাবে ৩-৪ দিন নিয়মিত খাওয়াতে হবে।
রসুন
- রসুন গরুর কৃমি দূর করতে বেশ উপকারী একটি খাদ্য।
- ২/৩ টি কাচা রসুন ঘাস বা পানীয় জাতীয় খাদ্যের সাথে দিনে একবার করে মিশিয়ে ২-৩ দিন খাওয়াতে হবে।
হলুদ
- হলুদে রয়েছে কারকুমিন উপাদান যা গরুর কৃমি দমন করতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
- হলুদ গুড়ো করে করে পানির সাথে মিশিয়ে বা অন্যান্য খাদ্য উপাদানের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
পেঁপে বীজ
- পেঁপে বীজ গরুর কৃমি দূর করতে বেশ কার্যকরী।
- পেঁপে বীজ পানির সাথে মিশিয়ে বা সরাসরি পেঁপে গরুকে ২-৩ দিন খাওয়াতে হবে।
মেথি বীজ
- মেথি বীজ অত্যান্ত কার্যকরী একটি কৃমিনাশক।
- এটি অন্ত্রের কৃমি সহ সকল ধরনের কৃমি খুব দ্রুত সময়ে দূর করতে পারে।
- মেথি বীজ পানির সাথে মিশিয়ে গরুকে খাওয়াতে হবে।
উল্লেখিত এ পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে প্রাকৃতিক উপায়ে সহজেই গরুর কৃমি দূর করতে পারেন। উল্লেখিত খাবার গুলো গরুর কৃমিনাশক হিসেবে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।