গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের নাম এবং ঘরোয়া চিকিৎসা।

সর্দি কাশি এবং গলা ব্যথা একটি সাধারণ অসুখ হলেও এর কারনে আমাদের বেশ অস্বস্তিতে পরতে হয়। খাবার গ্রহন করতে গেলে শুরু হয় গলা ব্যথা যার ফলে আমাদের খাবার গ্রহন ব্যহত হয়। তাছাড়া যেখানে সেখানে শুরু হয়ে যায় কাশি। যার ফলে আমাদের বেশ সমস্যা হয় তাই আমরা গলা ব্যথা এবং কাশি দ্রুত নিরাময় করতে চাই। তাই আমরা জানতে চাই গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের নাম সম্পর্কে।

গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের নাম এবং ব্যবহারের নিয়ম।

কাশি ও গলা ব্যথা যা একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, এটি সাধারণত ঠান্ডা, সর্দি, ধুলোবালি এবং ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। তবে সঠিক চিকিৎসার অভাবে এই সমস্যাগুলো কখনও কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যেতে পারে। গলা ব্যথা ও কাশি নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ রয়েছে। তবে ঔষধ গুলে ক্রয়ের পূর্বে সমস্যার ধরন বুঝে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা এবং তা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা খুবই জরুরি। সঠিক ঔষধ ব্যবহারে কাশি ও গলা ব্যথা দ্রুত নিরাময় হয় এবং শারীরিক অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

গলা ব্যথা ও কাশি কেন হয় ?

কাশি ও গলা ব্যথা সাধারণত সর্দির কারণে হয়ে থাকে, তবে আরও বিভিন্ন কারণেও এটি দেখা দিতে পারে। ঠান্ডা বা সর্দি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে গলায় ব্যথা এবং অতিরিক্ত কাশি হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণও এর প্রধান কারণ হয়ে থাকে। ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হলে প্রথমে কাশি শুরু হয় এবং পরে ধীরে ধীরে গলায় ব্যথা অনুভূত হয়।

তাছাড়া এলার্জি থেকেও গলায় তীব্র ব্যথা ও কাশি হতে পারে। ধুলোবালি, ফুলের রেণু এবং বিভিন্ন পশু পাখির লোম নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে এ ধরণের এলার্জি হয়ে থাকে। এর ফলে গলায় অস্বস্তি, ব্যথা এবং কাশি দেখা দিতে পারে। শীতকালে আবহাওয়া অতিরিক্ত আর্দ্র থাকার কারণে গলায় কফ শুকিয়ে যায়। এ অবস্থায় গলায় ব্যথা এবং কাশি বেশি হয়।

পড়ুন: গলায় খুশখুশে কাশির ঔষধ এর নাম।

ধূমপানও গলার তীব্র ব্যথা এবং কাশির একটি বড় কারণ হয়ে থাকে। এই কারণগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি বা একাধিক কারণে গলায় তীব্র ব্যথা এবং কাশি দেখা দিতে পারে। গলা ব্যথা ও কাশি থেকে মুক্তি পেতে এই কারণ গুলো চিহ্নিত করে সঠিক ব্যবস্থা ও ঔষধ গ্রহন করা জরুরি।

গলা ব্যথা ও কাশির লক্ষণ।

গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের নাম জানার পূর্বে গলা ব্যথা ও কাশির লক্ষণ গুলো জানা জরুরি। এখন আমরা জানবো গলা ব্যথা ও কাশির লক্ষণ সম্পর্কে।

নিচে গলা ব্যথা ও কাশির লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলো:

  • গলায় খসখসে ভাব হওয়া এবং অতিরিক্ত চুলকানি হওয়া।
  • খাবার গ্রহনের সময় এবং গোক গিলার সময় হালকা হালকা ব্যথা অনুভব করা।
  • অনেক সময় গলার নিচে ফোলে যেতে পারে।
  • গলার ভিতরে টনসিল ফোলে লাল হয়ে যাওয়া।
  • সর্দির কারনে যদি গলায় ব্যথা হয় তাহলে গলা ব্যথা করার পূর্বে মাথা ব্যথা করা।
  • গলা ব্যথা ধীরে ধীরে তীব্র হওয়া এবং কাশি শুরু হওয়া।
  • কোন কারন ছারা হঠাৎ করেই শুকনো কাশি শুরু হওয়া।
  • অতিরিক্ত কাশির ফলে বুকে ব্যথা করা।
  • কাশি শুরু হওয়ার পূর্বে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়া।

সাধারণত গলা ব্যথা ও কাশি শুরু হওয়ার আগে উল্লেখিত এ লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে।

গলা ব্যথা ও কাশির সেরা ১০টি ঔষধের নাম।

গলা ব্যথা ও কাশি ছোট বড় সকলেরই হয়ে থাকে যা একটি সাধারণ রোগ। তবে এ গলা ব্যথা ও কাশি আমাদেরকে বেশ অস্বস্তি দিয়ে থাকে। সাধারণ টনসিল সংক্রমণের ফলে আমাদের সর্দি হয় এবং এ সর্দি থেকে শুরু হয় কাশি এবং গলা ব্যথা। এ কাশি এবং গলা ব্যথা বেশ যন্ত্রণাদায়ক হওয়ার কারনে আমরা এ রোগটি দ্রুত নিরাময় করতে চাই। তাই আমরা জানতে চাই গলা ব্যথা এবং কাশির ভালো ঔষধ সম্পর্কে। নিচে গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের নাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

নিচে সবচেয়ে দ্রুত কার্যকরী গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের নাম উল্লেখ করা হলো:

  1. Dexotix (ডেক্সোটিক্স) 60 mg
  2. Tussilon (টুসিলন) 100 mg
  3. Tofen (টোফেন) 1 mg
  4. Ambrox (এমব্রোক্স) SR 75 mg
  5. Doxicap (ডক্সিকেপ) 100 mg
  6. Doxin (ডক্সিন) 100 mg
  7. Doxiva (ডক্সিভা) 200 mg
  8. Alkof (অ্যালকফ) Syrup
  9. Ambrox (এমব্রোক্স) Syrup
  10. Levostar (লিভোস্টার) Syrup

উল্লেখিত এ ঔষধ গুলো গলা ব্যথা ও কাশি উভয়ের ক্ষেত্রেই বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।

গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের ব্যবহার বিধি এবং মূল্য।

উপরে আমরা জেনেছি গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের নাম এবং দাম সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো উল্লেখিত গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের ব্যবহার বিধি সম্পর্কে।

নিচে গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধ গুলোর ব্যবহার ও মূল্য উল্লেখ করা হলো:

  • Dexotix 60 : এটি দিনে দু’বার সেবন করতে হবে। এর এক পাতা বা ৪ টি ট্যাবলেটের দাম ৪০ মূল্য।
  • Tussilon 100 : প্রাপ্তবয়স্ক ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দিনে দু’বার সেবন করতে হবে। এর এক পাতার দাম ১০০ মূল্য।
  • Tofen 1 : এটি বাচ্চা এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই দিনে দু’বার খাওয়ার পরে সেবন করতে হবে। এর এক পাতা বা ১৫ টি ট্যাবলেটের মূল্য ৬০ টাকা।
  • Ambrox SR : এ ট্যাবলেটটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দিনে ১/২ বার সেবন করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে ২/৩ বার সেবন করতে হবে। এর এক পাতা বা ১০ টি ট্যাবলেটের মূল্য ৫৫ টাকা।
  • Doxicap 100 : এ ট্যাবলেটটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দিনে দু’বার সেবন করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে তিনবার সেবন করতে হবে। এর একটি ট্যাবলেটের মূল্য ২.৫ টাকা।
  • Doxin 100 : এটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দিনে দু’বার সেবন করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে তিনবার সেবন করতে হবে। এর এক পাতা বা ১০ টি ট্যাবলেটের মূল্য ২২ টাকা।
  • Doxiva 200 : এটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দিনে একবার সেবন করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে দু’বার সেবন করতে হবে। এর এক পাতা বা ১০ টি ট্যাবলেটের মূল্য ৮০ টাকা।
  • Alkof Syrup : এ সিরাপটিও বাচ্চা এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই ২ চা চামচ করে দিনে তিনবার সেবন করতে হবে। এর ১০০ মিলি সিরাপের মূল্য ৭০ টাকা।
  • Ambrox Syrup : এটি শুধু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দিনে ২ চা চামচ করে দিনে তিনবার সেবন করতে হবে। এর ১০০ মিলি সিরাপের মূল্য ৫০ টাকা।
  • Levostar Syrup : এ সিরাপটিও শুধু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দিনে ২ চা চামচ করে দিনে তিনবার সেবন করতে হবে। এর ৫০ মিলি সিরাপের মূল্য ৩০ টাকা।

উল্লেখিত নিয়ম অনুসারে যেকোনো একটি ঔষধ সেবন করলে গলা ব্যথা ও কাশি ২-৩ দিনের মধ্যে নিরাময় হয়ে যাবে।

গলা ব্যথা ও কাশি কমানোর ঘরোয়া উপায়।

কাশি ও গলা ব্যথা হলে আমরা প্রথমেই ডাক্তারের কাছে বা ফার্সিতে চলে যাই এ রোগের সমাধানের জন্য। কিংবা জানতে চাই গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের নাম সম্পর্কে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে ঘরোয়া উপায়ে সহজেই গলা ব্যথা ও কাশি নিরাময় করা যায়। নিচে এ ঘরোয়া উপায় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

গলা ব্যথা ও কাশি নিরাময় করার ঘরোয়া উপায় গুলো হলো:

গলায় ব্যথা ও কাশি হলে লবন পানি দিয়ে দিনে ২-৩ বার গার্গল করতে হবে। এটি গলার ব্যথা ও কাশি নিরাময় করতে বেশ কার্যকরী।

আদা চা

গলায় ব্যথা ও কাশি হলে আদার চা সেবন করুন। পরিমান মতো গরম পানির সাথে কয়েক টুকরো আদা দিয়ে তা চায়ের মতো করে পান করুন। এভাবে দিনে ২-৩ বার পান করুন।

হলুদ

কাশি এবং গলায় ব্যথা হলে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে কয়েকটি হলুদের টুকরো মিশি তা চায়ের ন্যায় পান। এটি গলা ব্যথা এবং কাশি নিরাময় করতে বেশ কার্যকরী।

লেবু পানি

লেবু পানিও গলা ব্যথা এবং কাশি দূর করতে বেশ উপকারী। হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার সেবন করুন।

তুলিস পাতা

গলা ব্যথা ও কাশি নিরাময় করতে তুলিস পাতার রস বেশ কার্যকরী। তুলসি পাতার রস সকাল এবং সন্ধায় সেবন করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাশি এবং গলা ব্যথা নিরাময় হতে শুরু করবে।

উল্লেখিত এ ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করে সহজেই কোন প্রকার ঔষধ ছাড়া গলা ব্যথা এবং কাশি নিরাময় করা যায়।

গলা ব্যথা ও কাশি হলে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ?

গলা ব্যথা ও কাশি সাধারণত সর্দি, ঠান্ডা এবং বিভিন্ন ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে,যা কয়েক দিনের মধ্যে সাধারণ ঔষধ এবং ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু সময় এই সমস্যা গুলো মারাত্মক হতে পারে তখন ডাক্তারের কাছে জরুরি হয়ে পড়ে।

ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো:

  • গলা ব্যথা ও কাশি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
  • সাধারণ ঔষধ এবং ঘরোয়া চিকিৎসা নেওয়ার পরও নিরাময় না হলে।
  • গলা ব্যথা ও কাশির পাশাপাশি মাঝারি বা তার বেশি আাকারে জ্বর হলে এবং জ্বর বারবার উঠা নামা করলে।
  • গলা ব্যথা ও কাশির ফলে যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয় বা শ্বাসকষ্ট হলে।
  • যদি গলার ব্যথার কারণে কণ্ঠস্বর ভারী বা ফাটা মনে হয় এবং এটি এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে।
  • কাশির সাথে গলা থেকে রক্ত বের হতে থাকলে।
  • গলা থেকে রক্তক্ষরণ হলে।

খাবার বা পানি খাওয়ার সময় গলায় মাঝারি বা তীব্র ব্যথা হলে। গলা ব্যথা ও কাশি হলে যদি উল্লেখিত এ সমস্যা গুলো দেখা দেয় তবে অতিবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। গলা ব্যথা ও কাশির ঔষধের নাম ।

FAQ

প্রশ্নঃ গলা ব্যথা ও কাশির জন্য কোন ঔষধ ভালো ?
উত্তরঃ গলা ব্যথা ও কাশির জন্য ডেক্সোটিক্স ৬০, টুসিলন ১০০ ও অ্যালকফ সিরাপ সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।

প্রশ্নঃ কী কারণে গলা ব্যথা ও কাশি হয় ?
উত্তরঃ গলা ব্যথা ও কাশি সাধারণত ঠান্ডা বা সর্দি, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে। তবে কখনও কখনও ধূমপান বা গলার উপর অতিরিক্ত চাপ পরলে গলায় ব্যথা এবং কাশি হতে পারে।

প্রশ্নঃগলা ব্যথা ও কাশি কতদিন স্থায়ী হতে পারে ?
উত্তরঃ সাধারণত গলা ব্যথা ও কাশি ৩-৪ দিন স্থায়ী হতে পারে। তবে কোনো কোনো সময় ৭-১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।

প্রশ্নঃ গলা ব্যথা ও কাশির সঙ্গে জ্বর থাকলে কী করবেন ?
উত্তরঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন এবং গরম পানির গার্গল করুন।

প্রশ্নঃ গলা ব্যথা ও কাশির কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হলে কী করবেন ?
উত্তরঃ যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয় দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কেননা এটি ফুসফুস বা গলার সংক্রমণের কারণে হতে পারে যা চিকিৎসা ছাড়া গুরুতর হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top