আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি ঋতু রয়েছে। তাই কিছু দিন পর পর এ ঋতু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হয়। ঘন ঘন আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে আমাদের শরীর খাপ খাওয়াতে পারে না। আর তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের সর্দি কাশি হয়ে থাকে। আর সর্দিকাশি দীর্ঘ সময় ধরে থাকার ফলে আমাদের বুকে এবং গলায় কফ জমে যায়। গলায় কফ জমলে আমাদের বেশ অসুবিধা হয়ে থাকে। তাই এটি আমরা দ্রুত নিরাময় করতে চাই। এজন্য আমরা জানতে চাই গলার কফ দূর করার সিরাপ এবং ঔষধ সম্পর্কে।
গলার কফ দূর করার সিরাপ এবং ব্যবহারের নির্দেশনা।
নানা কারনেই আমাদের সর্দি কাশি হয়ে থাকে যা একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু কোনো কোনো সময় দেখা যায় এ সর্দি কাশি ভালো হয়ে গেলেও আমাদের গলায় এবং বুকে কফ জমে যায়। সর্দিকাশি যদি দীর্ঘ সময় লেগে থাকে তাহলে গলায় এ কফ জনিত সমস্যা গুলো হয়ে থাকে। গলায় কফ জমলে থাকলে কথা বলতে খেতে এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে আমাদের বেশ অসুবিধা হয়ে থাকে। তাই দ্রুত গলার কফ নিরূময় করতে অনেকেই গলার কফ দূর করার সিরাপ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু গলার কফ নিরাময়ে সঠিক সিরাপ সঠিক নিয়মে সেবন করা অত্যন্ত জরুরি।
গলায় কফ জমে কেন ?
গলায় এবং বুকে কফ জমা যা আমাদের বা আশেপাশের মানুষের একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারনেই হতে পরে। গলায় কফ জমলে আমাদের বেশ অস্বস্তি বোধ হয়ে থাকে। তাই আমরা জানতে চাই গলায় কফ কেন জমে
তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- সাধারণত সর্দিকাশি হলে তা দীর্ঘ সময় ধরে থাকার ফলে এক ধরনের ভাইরাল সংক্রমন হয়ে থাকে।
- যার কারনে প্রথমে বুকে এরপর ধীরে ধীরে গলায় কফ জমতে থাকে।
- অনেক সময় সাইনাস আক্রমণের ফলে গলায় কফ জমে যায়।
- তাছাড়া সাইনাস আক্রমণ হলে গলায় এবং নাকের মধ্যেও কফ জমে যায়।
- অনেক সময় রাস্তার ধুলো বালি এবং পশু পাখির লোম থেকে শ্বাসনালিতে এলার্জি হয়ে থাকে।
- আর শ্বাস নালিতে এলার্জি হওয়ার কারনে বুকে এবং গলায় কফ জমে যায়।
- অতিরিক্ত ধুমপানের ফলেও গলায় এলার্জি হয়ে থাকে।
- দীর্ঘ দিন ধুমপানের ফলে ফুসফুসে মারাত্মক প্রভাব পরে যার কারনে বুকে এবং গলায় ধীরে ধীরে কফ জমে যায়।
- অনেক সময় বায়ু দূষণের কারনেও গলায় এলার্জি হয়ে থাকে।
উল্লেখিত এ কারন গুলোর জন্যই সাধারণ গলায় কফ জমে থাকে।
গলায় কফ জমার লক্ষণ।
গলায় কফ জমলে তা বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়ে থাকে। গলায় কফ জমলে সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে যা প্রায়শই দেখা যায়।
নিচে গলায় কফ জমার লক্ষণ গুলোউল্লেখ করা হলো:
- গলা অতিরিক্ত খুসখুস করা।
- শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া।
- গলা সর্বদা ভারী ভারী অনুভব হওয়া।
- খুসখুসে কাশি হওয়া।
- গলা ব্যাথা করা।
- কন্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া।
- মুখে স্বাদ হ্রাস পাওয়া এবং গন্ধ হওয়া।
গলায় কফ জমলে সাধারনত উল্লেখিত এ লক্ষণ গুলো দেখা যায়।
গলার কফ দূর করার সিরাপ এর নাম।
গলায় কফ জমলে আমাদের বেশ অস্বস্তি বোধ হয়ে থাকে। তাই আমরা এটি দ্রুত নিরাময় করতে চাই। তাই অনেকেই জানতে চান যে গলার কফ দূর করার সিরাপ এবং ঔষধ এর নাম সম্পর্কে।
পড়ুন: গলার কফ দূর করার ট্যাবলেট
নিচে কয়েকটি গলার কফ দূর করার সিরাপ এর নাম উল্লেখ করা হলো:
- টুসপেল ( Tuspel Syrup ) সিরাপ
- ডেক্সট্রিম ( Dextrim Syrup ) সিরাপ
- অ্যালকফ ( Alkof Syrup ) সিরাপ
- তুস্কা প্লাস ( Tusca Plus syrup ) সিরাপ
- এডোভাস ( Adovas Syrup ) সিরাপ
- অ্যামব্রক্স ( Ambrox Syrup ) সিরাপ
- ওকফ ( Ocof Syrup ) সিরাপ
- অ্যাসকোরিল ( Askorel Syrup ) সিরাপ
উল্লেখিত সিরাপ গুলো গলার কফ দূর করতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। গলায় কফ জমলে উল্লেখিত এ সিরাপ গুলোর যেকোন একটি সঠিক নিয়মে সেবন করলে খুব দ্রুত গলার কফ কাশির সাথে বের হতে শুরু করবে। এ সিরাপ গুলো সাধারণত গলার শক্ত হয়ে জমে থাকা কফকে শিথিল করে দেয়। যার ফলে ধীরে ধীরে তা কাশির সাথে বের হয়ে যায়।
গলার কফ দূর করার সিরাপ এর দাম।
উপরে আমরা জেনেছি গলার কফ দূর করার সিরাপ এর নাম সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো উল্লেখি এ সিরাপ গুলোর মূল্য সম্পর্কে।
নিচে উল্লেখিত গলার কফ দূর করার সিরাপ এর দাম তুলে ধরা হলো:
- টুসপেল ( Tuspel Syrup ) সিরাপ: টুসপেল ১০০ মিলি সিরাপের মূল্য ৮৫ টাকা।
- ডেক্সট্রিম ( Dextrim Syrup ) সিরাপ: ডেক্সট্রিম এর ১০০ মিলি একটি সিরাপের মূল্য ১০০ টাকা।
- অ্যালকফ ( Alkof Syrup ) সিরাপ: একটি ১০০ মিলি অ্যালকফ সিরাপের মূল্য ৭০ টাকা।
- তুস্কা প্লাস ( Tusca Plus syrup ) সিরাপ:একটি ১০০ মিলি তুস্কা প্লাস সিরাপের মূল্য ৮৫ টাকা।
- এডোভাস ( Adovas Syrup ) সিরাপ: একটি ১০০ মিলি এডোভাস সিরাপের মূল্য ৭০ টাকা।
- অ্যামব্রক্স ( Ambrox Syrup ) সিরাপ: অ্যামব্রক্স এ সিরাপটির ১০০ মিলি এর মূল্য ৫০ টাকা।
- ওকফ ( Ocof Syrup ) সিরাপ: ওকফ এর একটি ১০০ মিলি সিরাপের মূল্য ১১০ টাকা।
- অ্যাসকোরিল ( Askorel Syrup ) সিরাপ: অ্যাসকোরিল এর একটি ১০০ মিলি সিরাপের মূল্য ৮০ টাকা।
উল্লেখিত এ গলার কফ দূর করার সিরাপ গুলো যেকোনো ঔষধের দোকান বা ফার্সিতে পেয়ে যাবেন। তবে এ সিরাপ গুলোর উল্লেখিত মূল্য সময় এবং স্থান বেধে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
গলার কফ দূর করার সিরাপ এর ব্যবহার বিধি।
অনেক সময় দেখা যায় যে সঠিক নিময়ে ঔষধ না খাওয়ার ফলে রোগ নিরাময় হয় না। তাই এখন আমরা জানবো উল্লেখিত গলার কফ দূর করার সিরাপ এর ব্যবহার বিধি সম্পর্কে।
গলার কফ দূর করার সিরাপের ব্যবহার বিধি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- Tuspel Syrup : টুসপেল এ সিরাপটি ২ চা চামচ করে দিনে তিনবেলা খাওয়ার পরে সেবন করতে হবে।১২ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে ২ চা চামচ করে দিনে দু’বার সেবন করতে হবে।
- Dextrim Syrup : এটি প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ১ চা চামচ করে তিনবার খাওয়ার পরে সেবন করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১ চা চামচ করে একবার সেবন করতে হবে।
- Alkof Syrup : অ্যালকফ এ সিরাপটি ৩ চা চাচামচ করে দিনে তিনবার সেবন করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১/২ চামচ করে দিনে তিনবার সেবন করতে হবে।
- Tusca Plus syrup : এটি প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ২ চা চামচ করে তিনবার সেবন করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এক চা চামচ করে দিন তিনবার সেবন করতে হবে।
- Adovas Syrup : এডোভাস এ সিরাপটি ১২ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে দিনে দু’বেলা সেবন করতে হবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ২ চা চামচ করে দিনে তিনবার সেবন করতে হবে।
- Ambrox Syrup : এটি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২ চা চামচ করে দিনে তিনবেলা খাওয়ার পর সেবন করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি ১ চা চামচ করে দিনে ২-৩ বার সেবন করতে হবে।
- Ocof Syrup : ওকফ এ সিরাপটি প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য দিনে ১ চা চামচ করে ৪ ঘন্টা পর পর সেবন করতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১ চা চামচ করে দিনে দু’বার সেবন করতে হবে।
- Askorel Syrup : এ সিরাপটি দিনে তিনবেলা ৩ চা চামচ করে সেবন করতে হবে।বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৩ চা চামচ দিনে দু’বার খাওয়ার পরে সেবন করতে হবে।
- উল্লেখিত ঔষধ সেবনের নিয়ম গুলো ডাক্তার দ্বারা নির্দেশিত। তাই এভাবে এ ঔষধ গুলো নিয়মিত সেবন করলে ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে গলায় কফ নিরাময় হয়ে যাবে।
গলার কফ বের করার ঘরোয়া উপায়।
এতোক্ষণ আমরা জেনেছি গলার কফ দূর করার সিরাপ এর নাম এবং গলায় কফ কেন হয় ইত্যাদি সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো গলার কফ বের করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। বেশ কিছু ঘরেয়া উপায় অবলম্বন করে গলার কফ সহজেই দূর করা যায়।
গলার কফ দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
পানি পান করা
গলায় কফ জমলে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। পানি পান করার ফলে গলায় জমে থাকা কফ পাতলা হয়ে আসে এবং কাশির সাথে বের হতে থাকে।
গার্গল করা
গলায় কফ জমলে গরম পানি দিয়ে গার্গল করলে কফ নিরাময় হয়ে যায়। গার্গল করার জন্য এক গ্লাস পরিমান গরম পানিতে কিছুটা লবন মিশিয়ে এ পানি দিয়ে গার্গল করতে হবে।
আদা চা
গলায় কফ জমলে বেশি বেশি হালকা গরম আদা চা খেতে হবে। এটি ২-৩ ঘন্টা পর পর খেতে হবে তবে বেশি গরম চা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আদা চা গলায় জমে থাকা কফ শিথিল করে দেয় এবং কাশির সাথে কফ বের হয়ে যায়।
গরম পানির সেক
গলায় কফ জমলে গরম পানির সেক নিলে নাক বন্ধ থাকলে তা পরিষ্কার করে দেয়। নাক এবং গলার মধ্যে জমা কফকে তরলে পরিনত করে। যার ফলে কাশির সাথে এ কফ ধীরে ধীরে বের হতে শুরু করে।
লেবু ও মধু
গলায় কফ জমলে লেবু ও মধু মিশ্রিত গরম পানি পান করতে হবে। এটি গলায় জমে থাকা শক্ত কফ নরম করে দেয়।পরবর্তীতে কাশির সাথে ধীরে ধীরে বের হতে শুরু করে।উল্লেখিত এ ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে কোনো প্রকার ঔষধ সেবন না করেই গলার কফ দূর যায়।