কোষ্ঠকাঠিন্য অত্যান্ত যন্ত্রনাদায়ক এবং বিরক্তিকর একটি রোগ যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বেশ প্রভাবিত করে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মল ত্যাগের সময় ব্যথা, রক্তপাত এবং মলত্যাগ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এ সমস্যা গুলো থেকে বাঁচতে আমরা দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে চাই। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিভিন্ন ঔষধের পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম ।
সাধারণত আমাদের খাদ্য তালিকায় আঁশ জাতীয় খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির ঘাটতি থাকার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অস্বস্তিদায়ক রোগ তাই আমরা এ রোগটি দ্রুত নিরাময় করতে চাই। তাই আমরা অনেকেই জানতে চাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম সম্পর্কে।
নিচে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কয়েকটি ব্যায়াম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো:
পবনমুক্তাসন যোগব্যায়াম
- পবনমুক্তাসন ব্যায়ামটি করতে পজিশন নিয়ে পিঠের উপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে শুইয়ে পড়ুন।
- এরপর পা ভাজ করুন।
- হাত দিয়ে হাঁটুতে ধরে চাপ দিয়ে তা বুকের দিকে নিয়ে আসুন বা বুকের দিকে চেপে ধরুন।
- এরপর মাথা উঁচু করে মুখ হাটুর সাথে লাগিয়ে ২ মিনিট এ পজিশনে থাকুন।
- এভাবে ৫ বার এ পবনমুক্তাসন ব্যায়ামটি করুন।
মালাসানা যোগব্যায়াম
- মালাসানা ব্যায়ামটি করার জন্য পজিশন নিয়ে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে পড়ুন।
- এরপর দু’হাতের কনুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে নমুস্কারের ভঙ্গিতে বসুন।
- এখন গভীরভাবে নিশ্বাস নিন এভাবে করে ৫ মিনিট এ মালাসানা যোগব্যায়ামটি করুন।
বালাসানা যোগব্যায়াম
- বালাসানা যোগব্যায়াম করতে নামাজের সিজদা দেওয়ার মতো পজিশন নিয়ে বসুন।
- এখন সিজদা দেওয়ার মতো করে নাক এবং কপাল মাটিতে স্পর্শ করান এবং হাত সামনের দিকে সোজা করে রাখুন।
- এভাবে প্রতিবার ২-৩ মিনিট করে ৪-৫ বার এ ব্যায়ামটি করুন।
বজ্রাসন যোগব্যায়াম
- বজ্রাসন এ ব্যায়ামটি করতে প্রথমে হাঁটু মুড়ে পায়ের পাতার উপর পজিশন নিয়ে বসুন।
- এরপর দু’হাত দু’পায়ের হাঁটুতে রাখুন এবং দীর্ঘ নিশ্বাস নিন।
- এভাবে সকাল এবং সন্ধায় বজ্রাসন ব্যায়ামটি ১৫-২০ মিনিট সময় ধরে করুন।
নিয়মিত হাঁটাহাটি করা
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হাঁটাহাটি বেশ কার্যকরী একটি ব্যায়াম।
- প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধায় ৩০ মিনিট সময় হাঁটাহাটি করুন।
- এভাবে ১-২ সপ্তাহ নিয়মিত নিয়ম করে হাটলে এর কার্যকরী প্রভাব দেখতে পাবেন।
উল্লেখিত এ ব্যায়াম গুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অত্যান্ত কার্যকরী। করো কোষ্ঠকাঠিন্য হলে উল্লেখিত এ ব্যায়াম গুলোর যেকোনো একটি ব্যায়াম নিয়মিত নিয়ম অনুসারে করলে খুব দ্রুত কার্যকরী ফলাফল পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য কোন ব্যায়াম ভালো।
উপরে আমরা জেনেছি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম সম্পর্কে এখন আমরা জানবো কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য কোন ব্যায়াম ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে উল্লেখিত ৫ টি ব্যায়ামই বেশ কার্যকরী। তবে পবনমুক্তাসন যোগব্যায়াম এবং মালাসানা যোগব্যায়াম এ দুটি ব্যায়াম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সবচেয়ে দ্রুত কার্যকরী হয়ে থাকে।
পবনমুক্তাসন যোগব্যায়াম
- পবনমুক্তাসন ব্যায়ামটি করতে প্রথমে পিঠের উপর ভর দিয়ে সোজা শুইয়ে পা ভাজ করুন।
- হাত দিয়ে হাঁটুতে ধরে চাপ দিয়ে তা বুকের দিকে নিয়ে আসুন বা বুকের দিকে চেপে ধরুন।
- এরপর মাথা উঁচু করে মুখ হাটুর সাথে লাগান এবং ২ মিনিট এ পজিশনে থাকুন।
- এভাবে করে ৫ বার এ পবনমুক্তাসন ব্যায়ামটি করুন।
- এ ব্যায়ামটি মলত্যাগ করার সময় ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকরী।
মালাসানা যোগব্যায়াম
- মালাসানা ব্যায়ামটি করতে প্রথমে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে পড়ুন।
- এরপর দু’হাতের কনুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে নমুস্কারের ভঙ্গি করুন।
- এবার গভীরভাবে নিশ্বাস নিন এভাবে করে ৫ মিনিট এ মালাসানা যোগব্যায়ামটি করুন।
- এ ব্যায়ামটি নিয়মিত করলে মলত্যাগের সময় রক্তপাত এবং মলত্যাগ দ্রুত করতে বেশ কার্যকরী।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এ দু’টি ব্যায়াম একসপ্তাহ নিয়মিত করলে এর কার্যকরী ফলাফল দেখতে পাবেন।
ব্যায়াম করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় কেন ?
আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন থাকে ব্যায়াম করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় কেন। ব্যায়াম করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়ার বেশ কিছু কারন রয়েছে। এসম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পড়ুন: হাত ব্যাথা দূর করার ব্যায়াম
ব্যায়াম করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়ার কারন গুলো হলো:
- ব্যায়াম করার ফলে অন্ত্রের মাংসপেশীর ক্ষমতা বা কার্যকারিতা দারুণ ভাবে বৃদ্ধি পায়।
- যার ফলে খুব সহজেই অন্ত্র খাদ্য এবং বর্জ্য নিষ্কাশন করতে পারে।
- যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।
- ব্যায়াম করার ফলে আমাদের অন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- যার ফলে অন্ত্রের প্রাচীর গুলোতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে যায়।
- আর মানসিক চাপ কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারন।
- তাই ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে যায় যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ কার্যকরী।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার পরে ব্যায়াম করলে শরীরের সমস্ত পেশীগুলোর কার্যকারিতা স্বাভাবিক হয়।
- যা আমাদের অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখে।
- যার ফলে কিছুদিনের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে শুরু হয়।
তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আমাদের সঠিক নিয়মে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কোনো কোনো সময় ব্যায়াম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ঔষধের থেকে বেশি কার্যকরী হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম ।
পুরুষের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ ?
এতোক্ষণ আমরা জেনেছি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম সম্পর্কে এখন আমরা জানবো পুরুষের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ ইত্যাদি সম্পর্কে। পুরুষের কোষ্ঠকাঠিন্যের বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
নিচে পুরুষের কোষ্ঠকাঠিন্যের কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো:
- শরীরে ফাইবার জাতীয় খাবারের ঘাটতি থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করার ফলে মল শক্ত হয়ে যায় যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
- অলস জীবনযাপন, কায়িকশ্রম না করা এবং ব্যায়ামের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
- কোনো কোনো সময় ব্যথানাশক ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
- মানসিক চাপ, সবসময় চিন্তা করা এবং মন খারাপ কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার অন্যতম কারন।
- অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারনে যেমন সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
- শরীরে থাইরয়েড হরমোনের আভাবের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
- নিয়মিত মলত্যাগ না করলে এবং মল চেপে রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
সাধারণত উল্লেখিত এ কারন গুলোর জন্যই পুরুষের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার খাবার।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম এর পাশাপাশি বেশ কিছু খাবার রয়েছে যা এ রোগটি দূর করতে বেশ কার্যকরী হয়ে থাকে। সাধারণত আমাদের শরীরের আঁশযুক্ত খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমান পানির অভাবের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আঁশজাতীয় খাবার বেশি বেশি গ্রহন করতে হবে। তাছাড়াও বেশ কিছু খাবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ দারুণ ভাবে কার্যকরী।
নিচে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার খাবার গুলো উল্লেখ করা হলো:
- কাঁচা পেঁপে
- শসার সালাদ
- মিষ্টি কুমড়া
- লাউ
- কলা
- আপেল
- ইসবগুলের ভুসি
- ছোলা
- ডাল
- কাঠ বাদাম
- চিনা বাদাম
- নাশপাতি
- গাজর
- কমলালেবু
- কলমি শাক
- পেয়ারা ইত্যাদি
উল্লেখিত এ খবার গুলো নিয়মিত সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব দ্রুত সময়ে নিরাময় হয়ে যাবে। এ খাবার গুলো আঁশযুক্ত খাবার হওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এ খাবার গুলো ভূমিকা মুখ্য।
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি হয় ?
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারনে আমাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আমাদের শরীরের কি কি ক্ষতি হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারনে শরীরে যে যে ক্ষতি হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারনে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত দিতে হয়।
- এর কারনে মলদ্বারের শিরা গুলো ফোলে যায়।
- যার ফলে মলদ্বারে হেমোরয়েড সৃষ্টি হয়ে যায়।
- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারনে মল শক্ত হয়ে যায়।
- যার কারনে মলত্যাগের সময় ব্যথা হয় এবং ধীরে মলাসয়ের আশেপাশে ক্ষত হয়ে যায়।
- দীর্ঘ সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারনে আমাদের মলদ্বরের রেকটাম নামক মলদ্বারের শেষ অংশ থাকে।
- যা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার ফলে বাহিরে বের হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে শরীরের কোলন তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়।
- যার ফলে হজম শক্তি এবং পুষ্টি শোষন হৃাস পায়।
- লম্বা সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারনে আমাদের মূলনালিতে বেশ চাপ তৈরি হয়।
- যার ফলে পস্রাবে সংক্রমণ বা ইনফেকশন হতে পারে।
তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আমাদের তা নিরাময় করতে অতিবিলম্বে ডাক্তারের সরণাপন্য হতে হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম ও ঔষধ সেবন করে তা নিরাময় করতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার লক্ষণ ?
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম বা ঔষধ সেবন করার পূর্ব আগে আমাদের বুঝতে হবে যে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে কিনা। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তার কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সে লক্ষণ গুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
এ কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার লক্ষণ গুলো হলো:
- এক সপ্তাহে তিন দিনের কম সময় পায়খানা হওয়া।
- মল শুকনো হওয়া এবং মল শক্ত ঢিলের মতো হওয়া।
- পায়খানার সময় মলে আকৃতি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বড় হওয়া।
- মল বের হওয়ার সময় তীব্র ব্যথা করা।
- পেটে কিছুক্ষন পর পর হালকা হালকা ব্যথা অনুভব হওয়া।
- সবসময় পেট ফোলা এবং ফাকা ফাকা ভাব অনুভব হওয়া।
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া।
- মল ত্যাগের পরও পেট পরিষ্কার হয়নি এমন মনে হওয়া।
- মলত্যাগে তৃপ্তি না পাওয়া এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দেওয়া ইত্যাদি।
উল্লেখিত এ লক্ষণ গুলো কারো মধ্যে প্রকাশ পেলে বুঝতে হবে যে তার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে।