আমাদের মুখে এবং জিহ্বায় ঘা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। বিভিন্ন কারণে আমাদের মুখে এবং জিহ্বায় ঘা হতে পারে। তার মধ্যে ভিটামিনের অভাব একটি অন্যতম প্রধান কারণ। কয়েকটি ভিটামিনের অভাব হলে আামাদের মুখে এই সমস্যা হতে পারে। আমাদের মুখে এবং জিহ্বায় এই ঘা হলে অনেক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে থাকে। তাই এই পোস্টে আমরা জানবো কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় ইত্যাদি সম্পর্কে।
কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় এবং ঘাটতি পূরনের উপায়।
মুখে ও জিহ্বায় ঘা সাধারণত শরীরে ভিটামিনের অভাবে হয়ে থাকে। ভিটামিনের অভাবে শুধু মুখে বা জিহ্বায় ঘা হয় না এটি আরও অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। যেমন, শরীরের ইমিউন সিস্টেম দূর্বল হওয়া, মুখের ভিতরের কোষ গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ক্লান্তি বেড়ে যাওয়া এবং ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়া। তবে সুখবর হলো এটাই যে কিছু সঠিক খাদ্যাভ্যাস যেমন, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল এবং ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট বা ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
মুখে ও জিহ্বায় ঘা কেন হয় ?
জিহ্বায় ও মুখে ঘা হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শরীরে ভিটামিনের অভাব। বিশেষ করে ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি২ এবং ভিটামিন সি-এর অভাব মুখের নরম টিস্যুগুলোর পুনর্গঠন বাধাগ্রস্ত করে, যা মুখে ও জিহ্বায় ঘা বা ক্ষতের সৃষ্টি করে। এ ধরনের ভিটামিনের অভাবে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে ছোটখাটো আঘাতেও মুখের ভেতর বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।
তবে ভিটামিনের অভাব ছাড়াও মুখে ও জিহ্বায় ঘা হওয়ার আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন মুখের ভেতরে আঘাত বা কেটে যাওয়া, দাঁত ব্রাশ করার সময় ব্রাশের আাঘাত লাগা। অনেক সময় দেখা যায় অ্যালার্জি, অ্যাসিডিটি বা কিছু বিশেষ ধরণের খাবার যেমন অত্যধিক মশলাদার বা টক খাবারও মুখের ভেতরে ঘা তৈরি করে থাকে।
তাছাড়া কিছু শারীরিক অসুস্থতা যেমন ডায়াবেটিস, হরমোনজনিত সমস্যা বা অটোইমিউন রোগের কারণেও মুখে ও জিহ্বায় ঘা হতে পারে। ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন, মুখের স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং অপর্যাপ্ত পানি পানও মুখে ঘা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় ।
মুখে ঘা হলে আমাদের অনে গুরুত্বর সমস্যায় পরতে হয়। কারন মুখে বা জিহ্বায় ঘা হলে আমাদের খাওয়া দাওয়া করার সময় মারাত্মক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। যার ফলে আমাদে অস্বস্তিতে দিন কাটাতে। মুখে এবং জিহ্বায় ঘা হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারন হলো ভিটামিনের অভাব। কয়েকটি ভিটামিনের কারনে মুখে ঘা হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় ।
নিচে যে ভিটামিন গুলোর অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় তা উল্লেখ করা হলো:
- ভিটামিন বি২ ( Vitamin B2 )
- ভিটামিন বি৩ ( Vitamin B3 )
- ভিটামিন বি১২ ( Vitamin B12 )
- ভিটামিন সি ( Vitamin C )
মুখে সাধারণত এই ভিটামিন গুলোর অভাবে ঘা হয়ে থাকে।
মুখে ও জিহ্বার ঘা এর লক্ষণ ।
জিহ্বায় বা মুখে ঘা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি কখনো কখনো শরীরের ভিটামিন ঘাটতির কারণে ঘটে। ভিটামিনের এই ঘাটতি শুধু মুখে ঘা নয় আরও অনেক সমস্যার তৈরি করতে পারে। মুখে ও জিহ্বায় ঘা হলে প্রাথমিক অবস্থায় বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়।
নিচে মুখে ও জিহ্বায় ঘা এর লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো:
- মশলাদার এবং গরম খাবার খাওয়ার সময় মুখে জ্বালাপোড়া করা।
- জিহ্বা ও মুখের ভেতরে ছোট লাল বা সাদা ক্ষতচিহ্ন দেখা দেওয়া।
- কথা বলা, খাবার খাওয়া ও পান করার সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া।
- জিহ্বার রঙ ফ্যাকাশে এবং লালচে হয়ে যাওয়া।
- মুখের ভেতর শুষ্ক হওয় এবং জিহ্বায় ফাটল দেখা দেওয়া।
- মুখে খাবারের স্বাদ কমে যাওয়া এবং তেতো লাগতে শুরু করা।
- কোনো কোনো সময় ঘা এর আকার বড় হয়ে যাওয়া এবং ঘা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া।
উল্লেখিত এই লক্ষণগুলো যদি বারবার প্রকাশিত হয় তবে বুঝতে হবে ভিটামিনের ঘাটতির কারণে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয়েছে।
ভিটামিনের অভাব দূর করার উপায়।
উপরে আমরা জেনেছি কোন ভিটিমানের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় এবং এর লক্ষণ সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো মুখে ও জিহ্বার ঘা দূর করতে কিভাবে ভিটামিনের অভাব পূরন করবো এই সম্পর্কে।
নিচে ভিটামিনের ঘাটতি পূরনের কয়েকটি কার্যকরী উপায় উল্লেখ করা হলো:
- পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি, ফল এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহন করা।
- রঙিন ফল খাওয়া যেমন পেঁপে, কমলা, আম ইত্যাদি।
- ভিটামিন বি-১২ এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম,দুধ,মাছ এবং মাংস খাওয়া।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা, পানি শরীরে ভিটামিনের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে।
- ভিটামিন-বি জাতীয় সাপ্লিমেন্ট বা ঔষধ গ্রহন করা।
ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হলে উল্লেখিত এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে সহজেই ভিটামিনের অভাব দূর হয়ে যাবে।
জিভে ঘা হলে কি খেলে ভালো হবে ?
জিভে ঘা হলে কি খেলে ভালো হবে এটি জানার পূর্বে আমাদের জানতে হবে যে কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় । জিভে ঘা হয় মূলত দুই ধরনের ভিটামিনের অভাবে তা হলো ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি। তাই আমাদের মুখ এবং জিভে ঘা হলে ভিটামিন বি এবং সি জাতীয় খাবার গ্রহন করতে হবে।
নিচে জিভে ঘা হলো কোন কোন খাবার খেতে হবে তা উল্লেখ করা হলো:
- ডিম
- দুধ
- মাংস
- পালন শাক
- কাচা বা বাজা বাদাম
- লেবু
- কমলা লেবু
- স্টবেরি
- টমেটো
মুখে ঘা হলে উল্লেখিত খাবার গুলোর যেকোন ২ থেকে ৩ টি খাবার নিয়মিত ২/৩ দিন গ্রহন করলে মুখের ঘা ভালো হতে শুরু করবে।
জিহ্বায় ঘা হলে কি কি খাওয়া যাবে না ?
নানা কারনেই আমাদের মুখে এবং জিহ্বায় ঘা হতে পারে।জিহ্বায় ঘা হওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে মূলত ভিটামিনের অভাব। মুখে ঘা হলে আমাদের খাওয়া দাওয়ার বেশ সমস্যা হয়ে থাকে। তাই আমরা জিহ্বার ঘা দ্রুত নিরাময় করতে চাই। তবে বেশ কিছু খাবার রয়েছে যে খাবার গুলো খেলে জিহ্বার ঘা শুকাতে অনেক লম্বা সময় লেগে যায়।
নিচে এই খাবার গুলোর নাম উল্লেখ করা হলো:
- অধিক ঝাল এবং মসলা জাতীয় খাবার।
- ঝাল এবং মসালাদার খাবার খেলে জিহ্বার ঘা এর যন্ত্রণা বেড়ে যায়।
- এক গ্লাস পরিমান হালকা গরম পানি নিয়ে পরিমান মতো লবন মিশিয়ে দিনে ৪ থেকে ৫ বার কুলকুচি করতে পারেন।
- এতে করে জিহ্বা পরিষ্কার থাকবে এবং ঘা কমে যেতে শুরু করবে।
- বেশি শক্ত জাতীয় খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যেমন শক্ত বিস্কিট ও ভুট্টা এ জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
- অ্যালকেহল জাতীয় খাবার বা পানীয় জাতীয় খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
- কেননা মুখে ঘা হলে এ জাতীয় পানীয় বা খাবার জিভে যন্ত্রণার সৃষ্টি করে থাকে।
- জিভে বা মুখে ঘা হলে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ধূমপানের ফলে জিহ্বায় নানা রকমের সংক্রমন হয় ফলে জিভের ঘা শুকাতে অনেক লম্বা সময় লেগে যায়।
জিভে ঘা হলে তা না শুকানো পর্যন্ত উল্লেখিত খাবার গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে জিহ্বার ঘা শুকাতে শুরু করবে। কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় ।
মুখে বার বার ঘা হয় কেন ?
আমাদের মুখের ভেতরে যে নরম আবরনটি থাকে তাকে মেমব্রেন বলা হয়। আমাদের মুখের এ মেমব্রেন নানা কারনেই যেমন পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে, ধাুমপান এবং ভিটামিনের অভাবে ক্ষয় হয়ে যায়। মুখের মেমব্রেনের এই ক্ষয় হওয়ার কারনে সাধারণত আমাদের মুখে ঘা হয়ে থাকে।
পড়ুন: কাটা ঘা শুকানোর মলমের নাম
অনেকের জিজ্ঞাসা থাকে যে মুখে বার বার ঘা কেন হয় এবং কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় । মূলত বিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি থাকলে মুখে ঘা হয়ে থাকে। শুধু ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয় না।
মুখে ঘা হওয়ার আরও নানা কারন রয়েছে:
- মুখের যত্নের অভাবে মুখে অনের ময়লা জমে যায়, যেখান থেকে মুখ ঘা হতে পারে।
- বেশিরভাগ সময় দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে মারিতে মোটামুটি জোরেশোরে ব্রাশের আঘাত লেগে যায় এবং সেখানে ঘা হয়ে যায়।
- অনেক সময় দেখা যায় আমরা কিছু চিবানোর সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে জিহ্বায় কামড় লেগে যায় এবং সেখান থেকে ঘা সৃষ্টি হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত গরম পানি বা খাবার এবং তার সাথে অতিরিক্ত ঝালযুক্ত খাবার গ্রহনের ফলে মুখের উপরের নরম আবরনটি পুড়ে যায়, এরপর সেখানে ঘা হয়ে যায়।
- ধুমপান, পান, জর্দা এবং সুপারি অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়ার ফলে মুখে বার বার ঘা হয়ে থাকে।
ইত্যাদি কারন গুলোর জন্য মুখে বার বার ঘা তৈরি হয়ে থাকে। তাই আামাদের সকলের মুখের যত্ন নিতে হবে এবং মুখের জন্য উপকারী এবং সহনীয় খাবার গ্রহন করতে হবে।
মুখের ভিতরে সাদা ঘা কেন হয় ?
নানা রকম কারনেই আমাদের মুখের ভিতরে সাদা ঘা হতে পারে। সাধারণত এই ঘা গুলো মুখের জন্য ক্ষতিকর এবং গুরুত্বর কোন সমস্যা নয়। কিন্তু এই ঘা হলে আমাদের খাওয়া দাওয়া করার সময় মারাত্মক যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। তাই আমরা এ রোগটি হলে তা দ্রুত সমাধান করতে চাই। মুখের ভিতরে সাদা ঘা কেন হয় তা জানার আগে জানতে হবে যে মুখে কয় ধরনের ঘা হয়। মুখে সাধারণত এক ধরনের ঘা হয়ে থাকে তবে ঘা এর রঙ ভিন্ন হয়ে থাকে।
যেমন:
- লাল রঙের ঘা
- হলুদ ঘা
- সাদা ঘা
সাদা ঘা হয়ে থাকে মূলত মুখ অপরিষ্কার থাকা, অতিরিক্ত গরম জাতীয় খাবার খাওয়া, ভিটামিন বি১২ এর অভাব, দাঁত ব্রাশের সময় ব্রাশের আঘাত, কিছু চিবানোর সময় অনাকাঙ্ক্ষিত জভে কামড় দেওয়া এবং ধুমপান করা ইত্যাদি। সাধারনত উল্লেখি এই কারন গুলোর জন্য আমাদের মুখে সাদা ঘা হয়ে থাকে। কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় ।
মুখের ঘা মারাত্মক হলে কিভাবে বুঝবো ?
উপরে আমরা আলোচনা করেছি কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয় এবং এর কারন গুলো সম্পর্কে। আমাদের অনেকের প্রশ্ন থাকে যে মুখের ঘা মারাত্মক হলে কিভাবে বুঝবো। মুখের ঘা মারাত্মক হলে এর বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে সে লক্ষণ গুলো দেখে আপনাকে বুঝতে হবে যে মুখে ঘা মারাত্মক হয়ে উঠেছে।
মুখের ঘা এর আকার সাধারণত ছোট এবং বৃত্তাকার হয়ে থাকে। যদি মুখের ঘা স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক বড় এবং অদ্ভুত আাকারের হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সাধারণত মুখে ঘা হলে এটি ১ সপ্তাহ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। যদি দেখা যায় এই সময়ের মধ্যে মুখে ঘা ভালো না হয় তবে বুঝতে হবে মুখের ঘা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
ঘা হওয়ার পাশাপাশি যদি শরীর বেথা শরীরে জ্বর ইত্যাদি হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি একটি মারাত্মক লক্ষণ। মুখে ঘা হলে এর বেথা খুব বেশি তীব্র হয় না। যদি দেখা যায় যে ঘা এর বেথা খুব বেশি তাহলে বুঝতে হবে এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।প্রথমে এক জায়গায় হওয়ার পরে পুরোপুরি ভালো না হওয়ার আাগের সেখানে পুনরায় ঘা হলে আমাদের বুঝতে হবে এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।
মুখে ঘা হলে এবং এর পর উল্লেখিত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আপনাকে অতি বিলম্বের সাথে একজন ডাক্তারের সরণাপন্য হতে হবে।